সকাল ১১টা। সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ মাঠে এসে নামল একটি হেলিকপ্টার।
কপ্টার থেকে বেরিয়ে এলেন পাগড়ি, শেরোয়ানি, চোস্ত পায়জামা আর নাগরা পরা এক ব্যক্তি। এরপর হাতিতে চড়ে দেড় শতাধিক সঙ্গীকে নিয়ে বাদ্য-বাজনার মধ্যে চললেন। আর রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করল হাজারো মানুষ।
বগুড়ায় সোনাতলায় এভাবেই এসে বিয়ে করলেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সফটওয়্যার প্রকৌশলী শামসুল আরেফীন খান। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে এ ‘রাজকীয়’ বিয়ে হয়।
বর আরেফীন মতলব উত্তরের খানবাড়ি পূর্বনাউরী এলাকার প্রবাসী শায়েস্তা খানের একমাত্র ছেলে। কনে ফারজানা আকতার স্নিগ্ধা সোনাতলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাবিলপুরের মৃত শামসউদ্দিন আকন্দের ছেলে জাকির হোসেন বেলালের বড় মেয়ে। স্নিগ্ধাও সফটওয়্যার প্রকৌশলী।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে আরেফীন হেলিকপ্টারে করে সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ মাঠে অবতরণ করেন।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন মা জেসমিন খান, বোন ও বোনজামাই। সেখান থেকে বরকে হাতিতে চড়িয়ে বাদ্য-বাজনার মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শ্বশুরবাড়ি কাবিলপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। হাজারো উত্সুক মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বরের যাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করে।
দেড় শতাধিক বরযাত্রী বিয়ের আগের দিন বৃহস্পতিবার বগুড়ায় এসে শহরের একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করে। শুক্রবার সকালে ১৫টি মাইক্রোযোগে বিয়েবাড়িতে আসে তারা। বর হাতি থেকে নেমে স্থানীয় মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। পরে বিয়ের আসরে বসেন। স্থানীয় কাজি হাবিবুর রহমান হাবিব বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। সোনাতলা ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বিয়ে পড়ান। বিয়েতে কাবিন ধার্য করা হয় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আমন্ত্রিত অতিথি ছিল প্রায় চার হাজার। অতিথিদের মধ্যে ছিল সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল করিম শ্যাম্পো, সোনাতলা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। বিয়েতে ব্যয় হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
বিয়ে অনুষ্ঠানের বাবুর্চি মঞ্জুর রহমান জানান, ২০ মণ চাল, চারটি গরু, আটটি খাসি জবাই করে রান্না করা হয়। রোস্ট করা হয় সাড়ে তিন হাজার মুরগি। আরো ছিল বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, সালাদ, দই, বোরহানি, মিষ্টি, কোমল পানীয়।
কনের বাবা জাকির হোসেন জানান, তাঁর চার মেয়ের মধ্যে স্নিগ্ধা সবার বড়। শখ ছিল, মেয়ের জামাইকে হাতিতে করে বাড়ি নিয়ে আসবেন। এ জন্য তিনি হাতির আয়োজন করেন। স্নিগ্ধা জানান, তাঁর বাবা একজন শৌখিন মানুষ। তিনি মা-বাবার বড় মেয়ে বলে বিয়েতে ব্যাপক আয়োজন ও ধুমধাম করা হয়।
বর শামসুল আরেফীন জানান, তিনি ঢাকার একটি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর বাবা জাপানপ্রবাসী। মাসে তাঁদের আয় ৮-১০ লাখ টাকা। হেলিকপ্টারে আসতে তাঁর ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল ৪টায় বর-কনে, বরের মা ও বোন হেলিকপ্টারে চেপে সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে রওনা দেন। কয়েক হাজার উত্সুক মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল।