ডেস্ক রিপোর্ট: প্রথমদিকে নাগরিকরা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) গুরুত্ব সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন ছিলেন না। কিন্তু দিন দিন নাগরিকদের কাছে এনআইডির গুরুত্ব বাড়ছে। এখন ব্যাংক হিসাব থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, জমিজমা বিক্রি করাসহ নানা কাজে এর ব্যবহার হচ্ছে। আর এসব কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেকের এনআইডিতেই বিভিন্ন তথ্য ভুল রয়েছে, যা সংশোধন করার প্রয়োজন পড়ছে।
এখন এনআইডির সংশোধন নিয়ে একেকজনের মনে একেক ধরনের প্রশ্ন আসে। এনআইডির কোনো তথ্য সংশোধনের জন্য কী করতে হবে এসব প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো—
প্রশ্ন : কার্ডের তথ্য কীভাবে সংশোধন করা যায়?
উত্তর : এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত উপযুক্ত দলিলাদি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
প্রশ্ন : কার্ডে কোনো সংশোধন করা হলে তার কি কোনো রেকর্ড রাখা হবে?
উত্তর : সকল সংশোধনের রেকর্ড সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
প্রশ্ন : ভুলক্রমে পিতা/স্বামী/মাতাকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হলে সংশোধনের জন্য কী কী সনদ দাখিল করতে হবে?
উত্তর : জীবিত পিতা/স্বামী/মাতাকে ভুলক্রমে মৃত হিসেবে উল্লেখ করার কারণে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
প্রশ্ন : ‘আমি অবিবাহিত। আমার কার্ডে পিতা না লিখে স্বামী লেখা হয়েছে’- এ ক্ষেত্রে কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আপনি বিবাহিত নন মর্মে প্রমাণাদিসহ আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন : বিয়ের পর স্বামীর নাম সংযোজনের প্রক্রিয়া কী?
উত্তর : নিকাহনামা ও স্বামীর আইডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করে এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন কার্যালয় বরাবর আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন : বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে স্বামীর নাম কীভাবে বাদ দিতে হবে?
উত্তর : বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত দলিল (তালাকনামা) সংযুক্ত করে এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন : বিবাহবিচ্ছেদের পর নতুন বিবাহ যাঁরা করেছেন, তাঁরা আগের স্বামীর নামের স্থলে বর্তমান স্বামীর নাম কীভাবে সংযুক্ত করবেন?
উত্তর : প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের তালাকনামা ও পরবর্তী বিয়ের কাবিননামাসহ সংশোধন ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন : জাতীয় পরিচয়পত্রে লেখা পেশা পরিবর্তন করতে হলে কী করতে হবে?
উত্তর : এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে প্রামাণিক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। উল্লেখ্য, আইডি কার্ডে এ তথ্য মুদ্রণ করা হয় না।
প্রশ্ন : জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি অস্পষ্ট, ছবি পরিবর্তন করতে হলে কী করতে হবে?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে নিজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন : নিজ/পিতা/স্বামী/মাতার নামের বানান সংশোধন করতে আবেদনের সঙ্গে কী কী দলিল জমা দিতে হবে?
উত্তর : এসএসসি/সমমান সনদ, জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সদন, চাকরির প্রমাণপত্র, নিকাহ্নামা, পিতা/স্বামী/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়।
প্রশ্ন : নিজের ডাক নাম বা অন্য নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য আবেদনের সঙ্গে কী কী দলিল জমা দিতে হবে?
উত্তর : এসএসসি/সমমান সনদ, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী/স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) সম্পাদিত এফিডেভিট ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, ওয়ারিশ সনদ, ইউনিয়ন/পৌর বা সিটি করপোরেশন হতে আপনার নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র।
প্রশ্ন : পিতা/মাতাকে ‘মৃত’ উল্লেখ করতে চাইলে কী কী সনদ দাখিল করতে হয়?
উত্তর : পিতা/মাতা/স্বামী মৃত উল্লেখ করতে চাইলে তাদের মৃত্যুর সনদ দাখিল করতে হবে।
প্রশ্ন : ঠিকানা কীভাবে পরিবর্তন/ সংশোধন করা যায়?
উত্তর : শুধু আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণেই ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে যে এলাকায় বসবাস করছেন সেই এলাকার উপজেলা/থানা নির্বাচন কার্যালয়ে ফরম নম্বর ১৩-এর মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। তবে একই ভোটার এলাকার মধ্যে পরিবর্তন বা ঠিকানার তথ্য বা বানানগত কোনো ভুল থাকলে সাধারণ সংশোধনের আবেদন ফরমে আবেদন করে সংশোধন করা যাবে।
প্রশ্ন : বৃদ্ধ ও অত্যন্ত দরিদ্রদের বয়স্কভাতা বা অন্য কোনো ভাতা খুব প্রয়োজন। কিন্তু নির্দিষ্ট বয়স না হওয়ার ফলে কোনো সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না। লোকে যে বলে, জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সটা বাড়ালে ওই সব ভাতা পাওয়া যাবে?
উত্তর : জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদত্ত বয়স প্রামাণিক দলিল ব্যতীত পরিবর্তন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, প্রামাণিক দলিল তদন্ত ও পরীক্ষা করে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
প্রশ্ন : একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের কার্ডে পিতা/মাতার নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে, কীভাবে তা সংশোধন করা যায়?
উত্তর : সবার কার্ডের কপি ও সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে পর্যাপ্ত প্রামাণিক দলিলসহ আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন : পাস না করেও অজ্ঞতাবশত শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তদূর্ধ্ব লিখেছেন, এখন বয়স বা অন্যান্য তথ্যাদি সংশোধনের উপায় কী?
উত্তর : হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) এসএসসি পাস করেননি, ভুলক্রমে লিখেছিলেন মর্মে হলফনামা করে এর কপিসহ সংশোধনের আবেদন করলে তা সংশোধন করা যাবে।
প্রশ্ন : জাতীয় পরিচয়পত্রে অন্য ব্যক্তির তথ্য চলে এসেছে। এ ভুল কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তর : ভুল তথ্যের সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত দলিল উপস্থাপন করে এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক যাচাই করার পর সঠিক পাওয়া গেলে সংশোধনের প্রক্রিয়া করা হবে।
প্রশ্ন : রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত বা সংশোধনের জন্য কী করতে হয়?
উত্তর : রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত বা সংশোধন করতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়কৃত ডায়াগনস্টিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।
প্রশ্ন : বয়স/জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর : এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এসএসসি বা সমমানের সনদপ্রাপ্ত না হয়ে থাকলে সঠিক বয়সের পক্ষে সব দলিল উপস্থাপনপূর্বক আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনে ডাক্তারি পরীক্ষা সাপেক্ষে সঠিক নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।
প্রশ্ন : স্বাক্ষর পরিবর্তন কীভাবে করতে হবে?
উত্তর : নতুন স্বাক্ষরের নমুনাসহ গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। তবে স্বাক্ষর একবারই পরিবর্তন করা যাবে।
প্রশ্ন : জন্ম তারিখ যথাযথভাবে লেখা হয়নি, প্রামাণিক কোনো দলিল নেই, তারপরও কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট উপজেলা/জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশ্ন : একটি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?
উত্তর : এক তথ্য শুধু একবার সংশোধন করা যাবে। তবে যুক্তিযুক্ত না হলে সংশোধন হবে না।