এম. বেলাল হোসাইন: সাতক্ষীরা সিটি কলেজ- এক অদ্ভুত প্রতিষ্ঠান। এখানে যিনিই ক্ষমতা পান, তিনিই নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন! আর এ কারণে ভবিষ্যতে কলেজটিতে শ্রেণিকক্ষে যতজন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকবে তার চেয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষকের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন অভিভাবকরা! সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ¯œাতক শ্রেণির বিভিন্ন বর্ষে শ্রেণিকক্ষে ৫/৭ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করেন। কিন্তু টিচার্স রুম গমগম করে শিক্ষকে। যেমন- গতকাল রবিবার সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তয় বর্ষের ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী!
এদিকে, উচ্চ আদালতের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নিয়োগের নামে ঘুষ বাণিজ্য জায়েজ করতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছেন সিটি কলেজ প্রশাসন। অভিযোগ, পূর্বে নিয়োগকৃত নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সাত মাস ধরে বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও আবারো গত ২৮ সেপ্টেম্বর নতুন আটজন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা সিটি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রদূত ও জাতীয় দৈনিক সমকালে ১৮জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে ওইসব পদে পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত কলেজের ১৪ জন শিক্ষক গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মাহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন(৯০৮১/১৫) দাখিল করেন। মামলায় কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতিসহ সাতজনকে বিবাদি করা হয়। আদালত বিবাদিদের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের রুল জারি করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির উপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন। হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিলকারি কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, হাইকোর্টে নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও গত বছরের ১৫ নভেম্বর সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, দর্শন ও ভুগোলসহ কয়েকটি বিষয়ে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। গত বছেরর পহেলা ডিসেম্বর ওইসব শিক্ষক কলেজে যোগদান করেন। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি কলেজ অধ্যক্ষ রিট পিটিশনকারি শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশে কলেজ পরিচালনা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা কেন বেআইনি হবে না এবং চাকুরিবিধি অনুযায়ী কেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে না তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। ২৫ জানুয়ারি নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জবাব প্রদান করেন। বিচারাধীন বিষয়ের উপর এ ধরণের নোটিশ দেওয়া আদালত অবমামননার শামিল। শিক্ষকদের জবাব পেয়ে ক্ষুব্ধ অধ্যক্ষ ২০১৫ সালের মে মাস থেকে বকেয়া বেতনভাতাদিসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সুযোগ সুবিধা বর্তমান অক্টোবর মাস পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছেন, যা’ আইনের পরিপন্থী। বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষকরা চলতি বছরের ১০ জুলাই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করলে আজো তারা কোন প্রতিকার পাননি। অথচ নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় জেল খাটা জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও কর্মচারীরা সাময়িক বরখাস্ত না হয়ে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও কলেজের অভ্যন্তরীণ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। এদিকে রিটকারি শিক্ষকদের বেতনভাতা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি আইন পরিপন্থি উল্লেখ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপনকারি ওইসব শিক্ষকদের বেতন ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তা মানেননি। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরা জানান, গত বছর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির উপর হ্ইাকোর্টের রুলটি চলমান থাকা স্বত্বেও হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শুন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অধ্যক্ষ আবু সাঈদ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগে রিটকারি শিক্ষকরা নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রেজিষ্ট্রি ডাকডোগে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদের ০১৭২০-৫০৬০৮৩ নম্বর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও নিয়োগ বোর্ডের ডিজি প্রতিনিধি প্রফেসর লিয়াকত পারভেজ বলেন, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ১৮ জন শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির উপর স্থগিতাদেশ সম্পর্কে তিনি অবহিত আছেন। তিনি সম্প্রতি হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাড. ফরহাদ মাহমুদ উল্লাহের পাঠানো একটি উকিল নোটিশ পেয়েছেন। তাতে বিচারাধীন হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট