সর্বশেষ সংবাদ-
সাতক্ষীরায় দ্রুতগামী পিকআপের চাপায় ভ্যান চালকের মৃত্যুকোন সাংবাদিক যেন হয়রানির শিকার না হয়–সাতক্ষীরায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব দীর্ঘদিন কাজ করেও সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি বিআরটিএ’র সীল মেকানিকদেররাষ্ট্রপতির ক্ষমার আগে ভুক্তভোগী ও পরিবারের মতামত নেওয়ার প্রস্তাবতালায় ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস’ অনুষ্ঠিতভোমরায় জামায়াতের হুইল চেয়ার বিতরণসাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ইটাগাছা এলাকা পরির্দশনে সদর ইউএনওপ্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদসাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রদল নেতার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ !জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশিকুর রহমানের পিতার মৃত্যু

বরেণ্য সংগীত শিল্পী আব্দুল জব্বারের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তা ভিত্তিহীন বলে প্রতিবাদ করেছেন তার স্ত্রী শাহিনা জব্বার। তিনি বলেন, ৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় সরকারের ত্রাণ তহবিলে দেয়া ১২ লাখ রুপি ফেরত চাননি আব্দুল জব্বার। একটি মহল তাকে হেয় করতে এ ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি শুধু দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন, যাতে সুস্থ হয়ে তিনি গানের ভূবনে আবার আসতে পারেন। সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন আব্দুল জব্বারের স্ত্রী শাহিনা জব্বার।

তিনি বলেন, আব্দুল জব্বার বাংলার মানুষের কাছে একজন কিংবদন্তী শিল্পী। তিনি জাতীয় শিল্পী। তবে তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি জনগণের কাছে এক টাকা করে চাচ্ছেন। এটা সত্য নয়। আবার কেউ বলছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাম্পে ক্যাম্পে হারমোনিয়াম নিয়ে গণসংগীত গেয়ে যে ১২ লাখ রুপি তৎকালীণ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দিয়ে ছিলেন এখন তিনি সে টাকা ফেরত চান। আসলে এটা জব্বার সাহেবের কথা নয়। এটি একটি চক্রান্ত। আব্দুল জব্বার মুক্তিযুুদ্ধের সময় দেশের জন্য কাজ করার কারণেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে তাকে বিপ্লবী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পদক দিয়েছেব। এই পদক এখন পর্যন্ত কোনো শিল্পীই পাননি।

আব্দুল জব্বারকে প্রধানন্ত্রীর দেয়া সহায়তার কথা তুলে ধরে সঙ্গীত শিল্পী শাহিনা বলেন, আব্দুল জব্বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনেক কিছু করেছেন। তিনি তার কাছে কৃতজ্ঞ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হাসপাতালের এসে চার লাখ টাকার বিল মওকুফ করে দিয়েছেন। তার চিকিৎসা ভালভাবেই হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমি জানি সরকার আব্দুল জব্বারকে মূল্যায়ন করেছেন এবং করবেন। তাই এটিকে নিয়ে কোনো হৈ চৈ করার দরকার নেই। আমরা মানুষের কাছে দোয়া চাই। কারণ বাঁচা-মরা একমাত্র আল্লাহর হাতে। তাই তাকে ছোট করার কোনো মানেই হয় না। কারণ তিনি একজন জাতীয় শিল্পী।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest

আগস্ট মাস।  এই আগস্ট মাসে আমার মায়ের যেমন জন্ম হয়েছে; আবার কামাল, আমার ভাই, আমার থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট, ওরও জন্ম এই আগস্ট মাসে।

৫ আগস্ট ওর জন্ম। নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস যে, এই মাসেই ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে জীবন দিতে হয়েছে আমার মাকে। আমার আব্বা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাতবরণ করেছেন, আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, কামাল, জামাল, রাসেল, কামাল-জামালের নব পরিণীতা বধূ, সুলতানা রোজী, আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসের, আমার ফুফা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৩ বছরের মেয়ে বেবী, ১০ বছরের আওরাফ, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, সুকান্তের মা এখানেই আছে। আমার বাবার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল, যে ছুটে এসেছিল বাঁচানোর জন্য। এই ১৫ আগস্টে একই সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, এভাবে পরিবারের এবং কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারসহ প্রায় ১৮ জন সদস্যকে।

এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল কেন? একটাই কারণ, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে সেই যুদ্ধ করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শাহাদাতবরণ করেছেন আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। পৃথিবীর ইতিহাসে কত নাম না জানা ঘটনা থাকে। আমার মায়ের স্মৃতির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে যে আজকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি। কিন্তু এই স্বাধীনতার জন্য আমার বাবা যেমন সংগ্রাম করেছেন, আর তার পাশে থেকে আমার মা, আমার দাদা-দাদি সব সময় সহযোগিতা করেছেন। আমার মা’র জন্মের পরেই তার পিতা মারা যান। তার মাত্র তিন বছর বয়স তখন। আমার নানা খুব শৌখিন ছিলেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন এবং সব সময় বলেছেন আমার দুই মেয়েকে বিএ পাস করাব। সেই যুগে টুঙ্গিপাড়ার মতো অজপাড়াগাঁয়ে ঢাকা থেকে যেতে লাগত ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা। সেই জায়গায় বসে এই চিন্তা করা। এটা অনেক বড় মনের পরিচয়। তখনকার দিনে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।

মিশনারি স্কুলে কিছু প্রাথমিক শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেন। কিন্তু তারপর আর বেশি দিন স্কুলে যেতে পারেননি, স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল বলে। আর ওই এলাকায় স্কুলও ছিল না। একটাই স্কুল ছিল, জিটি স্কুল। অর্থাৎ গিমাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া স্কুল। যেটা আমাদের পূর্বপুরুষদেরই করা। আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক মাইলের ওপর, প্রায় দেড় কিলোমিটারের কাছাকাছি। দূরে কাঁচা মাটির রাস্তা। একমাত্র কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়ে যাও অথবা নৌকায় যাও, মেয়েদের যাওয়া একদম নিষিদ্ধ। বাড়িতে পড়াশোনার জন্য পণ্ডিত রাখা হতো। মাস্টার ছিল আরবি পড়ার জন্য। কিন্তু আমার মা’র পড়শোনার প্রতি অদম্য একটা আগ্রহ ছিল। মায়ের যখন তিন বছর বয়স তখন তার বাবা মারা গেলেন। আপনারা জানেন যে, সে সময় বাবার সামনে ছেলে মারা গেলে মুসলিম আইনে ছেলের ছেলে-মেয়েরা কোনো সম্পত্তি পেত না। আমার মায়ের দাদা তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে তার দুই নাতনিকে তার নিজেরই আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলেদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে যান এবং সব সম্পত্তি দুই নাতনির নামে লিখে দিয়ে আমার দাদাকে মোতাওয়াল্লি করে দিয়ে যান। এর কিছু দিন পর আমার নানীও মারা যান, সেই থেকে আমার মা মানুষ হয়েছেন আমার দাদির কাছে। পাশাপাশি বাড়ি একই বাড়ি, একই উঠোন। কাজেই আমার দাদি নিয়ে আসেন আমার মাকে। আর আমার খালা দাদার কাছেই থেকে যান।

এই ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদের সঙ্গেই তিনি বেড়ে ওঠেন ছোটবেলা থেকেই। উনার ছোটবেলায় অনেক গল্প আমরা শুনতাম। আমার দাদা-দাদির কাছে, ফুফুদের কাছে। বাবা রাজনীতি করছেন সেই কলকাতা শহরে পড়াশোনা করতেন তখন থেকেই। এবং মানবতার জন্য তার যে কাজ এবং কাজ করার যে আকাঙ্ক্ষা যার জন্য জীবনে অনেক ঝুঁকি তিনি নিয়েছেন। সেই ’৪৭-এর রায়টের সময় মানুষকে সাহায্য করা, যখন দুর্ভিক্ষ হয় তখন মানুষকে সাহায্য করা; সব সময় স্কুল জীবন থেকেই তিনি এভাবে মানুষের সেবা করে গেছেন। আমরা দাদা-দাদির কাছেই থাকতাম। যখন পাকিস্তান হলো আব্বা যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেন। সে সময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করলেন। ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন। প্রথম ভাষা আন্দোলন ’৪৮ সালে। ১১ মার্চ ধর্মঘট ডাকা হলো, সেই ধর্মঘট ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হলেন।

এরপর ’৫৯ সালে ভুখা মিছিল করলেন। তখনও গ্রেফতার, বলতে গেলে ’৪৭ সাল থেকে ’৪৯ সালের মধ্যে ৩-৪ বার তিনি গ্রেফতার হন। এরপর ’৪৯ সালের অক্টোবরে যখন গ্রেফতার করে আর কিন্তু তাকে ছাড়েনি। সেই ’৫২ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দী ছিলেন এবং বন্দীখানায় থেকে ভাষা আন্দোলনের তিনি সব রকম কর্মকাণ্ড চালাতেন। গোপনে হাসপাতালে বসে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো।

মা শুধু খবরই শুনতেন, যে এই অবস্থা, কাজেই স্বামীকে তিনি খুব কম সময়ই কাছে পেতেন। আমি যদি আমাদের জীবনটার দিকে ফিরে তাকাই এবং আমার বাবার জীবনটা যদি দেখি, কখনো একটানা দুটি বছর আমরা কিন্তু বাবাকে কাছে পাইনি। কাজেই স্ত্রী হিসেবে আমার মা ঠিক এভাবে বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু কখনো কোনো দিন কোনো অনুযোগ-অভিযোগ তিনি করতেন না। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন যে, তার স্বামী দেশের জন্য কাজ করছেন, মানুষের জন্য কাজ করছেন, যে কাজ করছেন তা মানুষের কল্যাণের জন্য করছেন। মায়ের দাদা যে সম্পত্তি দিয়ে গেছেন— প্রচুর জমিজমা। জমিদার ছিলেন। সব সম্পত্তি মার নামে। এর থেকে যে টাকা আসত আমার দাদা সব সময় সে টাকা আমার মার হাতে দিয়ে দিতেন। একটি টাকাও মা নিজের জন্য খরচ করতেন না, সব জমিয়ে রাখতেন। কারণ জানতেন যে, আমার বাবা রাজনীতি করেন, তার টাকার অনেক দরকার, আমার দাদা-দাদি সব সময় দিতেন। দাদা সব সময় ছেলেকে দিতেন, তার পরেও মা তার ওই অংশটুকু, বলতে গেলে নিজেকে বঞ্চিত করে টাকাটা বাবার হাতে সব সময়ই তুলে দিতেন। এভাবেই তিনি সহযোগিতা শুরু করেন তখন কতইবা বয়স। পরবর্তীতে যখন ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচনী কাজে সবাই সম্পৃক্ত। আমার মাও সে সময় কাজ করেছেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে আব্বা আমাকে নিয়ে আসেন, আব্বার ইচ্ছা ছিল আমাদেরকে ভালোভাবে স্কুলে পড়াবেন। এর পরে উনি মন্ত্রিসভার সদস্য হলেন। আবার মন্ত্রিসভা ভেঙে গেল, আমার এখনো মনে আছে, তখন আমরা খুব ছোট, কামাল-জামাল কেবল হামাগুড়ি দেয়। তখন মিন্টুরোডের তিন নম্বর বাসায় আমরা। একদিন সকাল বেলা উঠে দেখি মা খাটের ওপর বসে আছেন চুপচাপ, মুখটা গম্ভীর। আমি তো খুবই ছোট, কিছুই জানি না। রাতে বাসায় পুলিশ এসেছে, বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।

মা বসা খাটের উপরে, চোখে দুই ফোটা অশ্রু। আমি জিজ্ঞেস করলাম বাবা কই, কয় তোমার বাবাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে। চোখের সামনে থেকে এই প্রথম গ্রেফতার, ১৪ দিনের নোটিস দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল, কোথায় যাবেন কেবল ঢাকায় এসেছেন, খুব কম মানুষকে মা চিনতেন। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ওই বাসায় মানুষে মানুষে গমগম করত কিন্তু ওইদিন সব ফাঁকা, আমার আব্বার ফুফাতো ভাই, আমার এক নানা তারা এলেন, বাড়ি খোঁজার চেষ্টা। নাজিরাবাজার একটা বাড়ি পাওয়া গেল, সে বাসায় আমাদের নিয়ে উঠলেন, এভাবেই একটার পর একটা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। কিন্তু একটা জিনিস আমি বলব যে, আমার মাকে আমি কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। কখনো যত কষ্টই হোক আমার বাবাকে কখনো বলেননি যে তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও বা চলে আসো বা সংসার কর বা সংসারের খরচ দাও। কখনো না।

সংসারটা কীভাবে চলবে সম্পূর্ণভাবে তিনি নিজে করতেন। কোনো দিন জীবনে কোনো প্রয়োজনে আমার বাবাকে বিরক্ত করেননি। মেয়েদের অনেক আকাঙ্ক্ষা থাকে স্বামীদের কাছ থেকে পাওয়ার। শাড়ি, গয়না, বাড়ি, গাড়ি কত কিছু।

এত কষ্ট তিনি করেছেন জীবনে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলেননি। চাননি। ’৫৪ সালের পরেও বারবার কিন্তু গ্রেফতার হতে হয়েছে। তারপর ’৫৫ সালে তিনি আবার মন্ত্রী হন, তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচন করে জয়ী হন, মন্ত্রিসভায় যোগ দেন, আমরা ১৫ নম্বর আবদুল গণি রোডে এসে উঠি। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখব সবাই মন্ত্রিত্বের জন্য দল ত্যাগ করে, আর আমি দেখেছি আমার বাবাকে যে তিনি সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য নিজের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন, ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন।

কোনো সাধারণ নারী যদি হতো তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করত যে, স্বামী মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিচ্ছে। এই যে আমার বাড়ি গাড়ি এগুলো সব হারাবে, এটা কখনো হয়তো মেনে নিত না। এ নিয়ে ঝগড়াঝাটি হতো, অনুযোগ হতো; কিন্তু আমার মাকে দেখি নাই, এ ব্যাপারে একটা কথাও তিনি বলেছেন। বরং আব্বা যে পদক্ষেপ নিতেন সেটাকেই সমর্থন করতেন।

সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে তিনি চলে গেলেন ছোট্ট জায়গায়। এরপর আব্বাকে টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান করলেন সোহরাওয়ার্দী সাহেব। তখন সেগুনবাগিচায় একটা বাসায় থাকতে দেওয়া হলো। এরপরই এলো মার্শাল ল। আইয়ুব খান যেদিন মার্শাল ল ডিক্লেয়ার করলেন আব্বা করাচিতে ছিলেন। তাড়াতাড়ি চলে এলেন, ওই দিন রাতে ফিরে এলেন। তারপরই ১১ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ১২ তারিখে আব্বাকে গ্রেফতার করা হলো। আমার দাদি আমাদের সঙ্গে ছিলেন, গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে যে নগদ টাকা ছিল আমাদের গাড়ি ছিল সব সিজ করে নিয়ে যাওয়া হলো।

অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে আমার মাকে দেখেছি সে অবস্থা সামাল দিতে। মাত্র ছয় দিনের নোটিস দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল। মালপত্র নিয়ে রাস্তার ওপর আমরা ছোট ছোট ভাইবোন। তখন রেহানা খুবই ছোট। একজন একটা বাসা দিল। দুই কামরার বাসাতে আমরা গিয়ে উঠলাম। দিন-রাত বাড়ি খোঁজা আর আব্বার বিরুদ্ধে তখন একটার পর একটা মামলা দিচ্ছে, এই মামলা-মোকদ্দমা চালানো, কোর্টে যাওয়া এবং বাড়ি খোঁজা সব কাজ আমার মা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে করতেন।

আওয়ামী লীগের এবং আব্বার বন্ধুবান্ধব ছিল। আমার দাদা সব সময় চাল, ডাল, টাকা-পয়সা পাঠাতেন। হয়তো সে কষ্টটা অতটা ছিল না, আর যদি কখনো কষ্ট পেতেন মুখ ফুটে সেটা বলতেন না।

এরপর সেগুনবাগিচায় দোতলা একটা বাসায় আমরা উঠলাম। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর অসুখ-বিসুখ হলে তাকে সাহায্য করা, যারা বন্দী তাদের পরিবারগুলো দেখা, কার বাড়িতে বাজার হচ্ছে না সে খোঁজখবর নেওয়া এবং এগুলো করতে গিয়ে মা কখনো কখনো গহনা বিক্রি করেছেন। আমার মা কখনো কিছু না বলতেন না।

আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিল, আব্বা আমেরিকা যখন গিয়েছেন ফ্রিজ নিয়ে এসেছেন। সেই ফ্রিজটা বিক্রি করে দিলেন। আমাদের বললেন, ঠাণ্ডা পানি খেলে সর্দি কাশি হয়, গলা ব্যথা হয়, ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ঠিক না। কাজেই এটা বিক্রি করে দিই। কিন্তু এটা কখনো বলেননি যে আমার টাকার অভাব। সংসার চালাতে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সাহায্য করতে হচ্ছে। কে অসুস্থ তাকে টাকা দিতে হচ্ছে। কখনো অভাব কথাটা মায়ের কাছ থেকে শুনিনি। এমনও দিন গেছে বাজার করতে পারেননি। আমাদের কিন্তু কোনো দিন বলেননি আমার টাকা নাই, বাজার করতে পারলাম না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছেন, আচার দিয়ে বলেছেন প্রতিদিন ভাত ভালো লাগে নাকি; আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাব। এটা খেতে খুব মজা। আমাদের সেভাবে তিনি খাবার দিয়েছেন। একজন মানুষ তার চরিত্র দৃঢ় থাকলে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা ধারণ করতে পারে। অভাব-অনটনের কথা, হা-হুতাশ কখনো আমার মার মুখে শুনিনি। আমি তার বড় মেয়ে। আমার সঙ্গে আমার মায়ের বয়সের তফাৎ খুব বেশি ছিল না। তার মা নাই বাবা নাই কেউ নাই। বড় মেয়ে হিসেবে আমিই ছিলাম মা, আমিই বাবা, আমিই বন্ধু। কাজেই ঘটনাগুলো আমি যতটা জানতাম আর কেউ জানত না। আমি বুঝতে পারতাম। ভাইবোন ছোট ছোট তারা বুঝতে পারত না। প্রতিটি পদে পদে তিনি সংগঠনকে, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছেন। তবে প্রকাশ্যে আসতেন না। তিনি ঠাট্টা করে বলতেন আমি আইয়ুব খানকে ধন্যবাদ দেই, কেন?

আব্বা ’৫৮ সালে অ্যারেস্ট হন, ’৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হেবিয়াস কর্পাস করে মুক্তি পান। সোহরাওয়ার্দী সাহেব নিজে এসে মামলা পরিচালনা করেন। তখন তিনি জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু  ইমবার্গো থাকে যে, উনি ঢাকার বাইরে যেতে পারবেন না। রাজনীতি করতে পারবেন না। সব রাজনীতি বন্ধ। ওই অবস্থায় আব্বা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি নেন। তখন সত্যি কথা বলতে কি হাতে টাকা-পয়সা, ভালো বেতন, গাড়ি-টাড়ি সব আছে। একটু ভালোভাবে থাকার সুযোগ মা’র হলো। তিনি ঠাট্টা করে বলতেন আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় আইয়ুব খান এনে দিয়েছিল। উনি চাকরি করছেন আমি স্থিরভাবে জীবনটা চালাতে পারছি। ওই সময় ধানমন্ডিতে দুইটা কামরা তিনি করেন।

এরপর আমাদের ওই ’৬১ সালের অক্টোবরে আমরা ধানমন্ডি চলে আসি। এ বাড়িটা তৈরি করার সময় লেবার খরচ বাঁচানোর জন্য আমার মা নিজের হাতে ওয়ালে পানি দিতেন, ইট বিছাতেন। আমাদেরকে নিয়ে কাজ করতেন।

বাড়িতে সবকিছুই ছিল। আব্বা তখন ভালো বেতন পাচ্ছেন। তারপরেও জীবনের চলার পথে সীমাবদ্ধতা থাকা বা সীমিতভাবে চলা, সবকিছুতে সংযতভাবে চলা— এই জিনিসটা কিন্তু সব সময় মা আমাদের শিখিয়েছেন।

এরপরে তো দিনের পর দিন পরিস্থিতি উত্তাল হলো। ’৬২ সালে আবার আব্বা গ্রেফতার হলেন, ’৬৪ সালে আবার গ্রেফতার হলেন, আমি যদি হিসাব করি কখনো আমি দেখিনি দুটো বছর তিনি একনাগাড়ে কারাগারের বাইরে ছিলেন। জেলখানায় থাকলে সেখানে যাওয়া, আব্বার কি লাগবে সেটা দেখা, তার কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়া, মামলা-মোকদ্দমা চালানো সবই কিন্তু মা করে গেছেন। সব। পাশাপাশি সংগঠনের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ তার ছিল। বিশেষ করে ছাত্রলীগ তো তিনি নিজের হাতেই গড়ে তোলেন। ছাত্রলীগের পরামর্শ, যা কিছু দরকার তিনি দেখতেন।

’৬৪ সালে একটা রায়ট হয়েছিল। আব্বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সময় হিন্দু পরিবারগুলোকে বাসায় নিয়ে আসতেন, সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের শেল্টারের ব্যবস্থা করতেন। ভলেন্টিয়ার করে দিয়েছিলেন রায়ট থামানোর জন্য, জীবনে যত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আমার বাবা করেছেন, আদমজীতে বাঙালি বিহারী রায়ট হলো, সেখানে তিনি ছুটে গেছেন। প্রতিটি সময় এই যে কাজগুলো করেছেন আমার মা কিন্তু ছায়ার মতো তাকে সাহায্য করে গেছেন, কখনো এ নিয়ে অনুযোগ করেননি। এই যে একটার পর একটা পরিবার নিয়ে আসতেন তাদের জন্য রান্নাবান্না করা, খাওয়ানো, সব দায়িত্ব পালন করতেন। সব নিজেই করতেন।

 

এরপর দিলেন ৬ দফা। ৬ দফা দেওয়ার পর তিনি যে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন, যেখানে বক্তৃতা দিয়েছেন, সেখানে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন। আবার মুক্তি পেয়েছেন, আবার আরেক জেলায় গেছেন, এভাবে চলতে চলতে ’৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করল।

তারপর তো আর মুক্তি পাননি, এই কারাগার থেকে বন্দী করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেল, ৫ মাস আমরা জানতেও পারিনি তিনি কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন কিনা। সে সময় আন্দোলন গড়ে তোলা, ৭ জুনের হরতাল পালন। আমার মাকে দেখেছি, তিনি আমাদেরকে নিয়ে ছোট ফুফুর বাসায় যেতেন, কেননা সেখানে ফ্ল্যাট ছিল। ওখানে গিয়ে নিজে পায়ের স্যান্ডেল বদলাতেন, কাপড় বদলাতেন, বোরকা পরতেন, একটা স্কুটারে করে আমার মামা ছিলেন ঢাকায় পড়ত তাকে নিয়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন, আন্দোলন চালাবে কীভাবে তার পরামর্শ নিজে দিতেন।

তিনি ফিরে এসে আমাদের নিয়ে বাসায় ফিরতেন। কারণ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সব সময় নজরদারিতে রাখত। কাজেই গোয়েন্দাদের নজরদারি থেকে বাঁচাতে তিনি এভাবেই কাজ করতেন। ছাত্রদের আন্দোলনকে কীভাবে গতিশীল করা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং এ হরতালটা যেন সফল হয়, আন্দোলন বাড়ে, সফল হয়; তার জন্য তিনি কাজ করতেন। কিন্তু কখনো পত্রিকায় ছবি ওঠা, বিবৃতি এসবে তিনি ছিলেন না। একটা সময় এলো ৬ দফা, না ৮ দফা, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নেতারা চলে এলেন। আমাদেরও অনেক বড় বড় নেতা চলে এলেন। কারণ আওয়ামী লীগ এমন একটা দল যে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা সব সময় ঠিক থাকেন কিন্তু নেতারা একটু বেতালা হয়ে যান মাঝে মাঝে, এটা আমার ছোটবেলা থেকেই দেখা।

এই সময়ও দেখলাম ৬ দফা, না ৮ দফা, বড় বড় নেতারা এলেন করাচি থেকে। তখন শাহবাগ হোটেল আজকে যেটা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আমার মা মাঝে মাঝে আমাকে পাঠাতেন যে, যা একটু, নেতারা আসছেন, তাদের স্ত্রীরা আসছেন, তাদের খোঁজখবর নিয়ে আয়, আমার সঙ্গে কে কে আছে দেখে আয়, মানে একটু গোয়েন্দাগিরি করে আসা আর কি, তো আমি রাসেলকে নিয়ে চলে যেতাম, মার কাছে এসে যা যা ব্রিফ দেওয়ার দিতাম। তাছাড়া মা’র একটা ভালো নেটওয়ার্ক ছিল ঢাকা শহরে।

মহানগর আওয়ামী লীগের গাজী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে কখন কী হচ্ছে সমস্ত খবর আমার মা’র কাছে চলে আসত। তখন তিনি এভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। মফস্বল থেকেও নেতারা আসতেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। কারণ রাজনৈতিকভাবে তিনি যে কত সচেতন ছিলেন সেটা আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কাজেই সেই সময় ৬ দফা থেকে এক চুল এদিক-ওদিক যাবেন না এটাই ছিল তার সিদ্ধান্ত। এটা আব্বাকে বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের নেতারা সব উঠেপড়ে লাগলেন ৮ দফা খুবই ভালো। ৮ দফা মানতে হবে, আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে; আমি তখন কলেজে পড়ি, তারপর আমি ইউনিভার্সিটিতে চলে গেলাম, সে সময় আমাদের নামিদামি নেতারা ছিলেন, কেউ কেউ বলতেন তুমি মা কিছু বোঝ না। আমি বলতাম কিছু বোঝার দরকার নেই, আব্বা বলেছেন ৬ দফা। ৬ দফাই দরকার এর বাইরে নয়। আমার মা’কে বোঝাতেন, আপনি ভাবী বুঝতে পারছেন না, তিনি বলতেন আমি তো ভাই বেশি লেখাপড়া জানি না, খালি এই টুকুই বুঝি ৬ দফাই হচ্ছে বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ। এটা উনি বলে গেছেন, এটাই আমি মানি এর বাইরে আমি কিছু জানি না। এভাবে তারা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, আমাদের বাসায় ওয়ার্কিং কমিটির তিন দিনের মিটিং। রান্নাবান্না, তখন তো এত ডেকোরেশন ছিল না; অত টাকা-পয়সা পার্টির ছিল না। আমার মা নিজের হাতেই রান্না করে খাওয়াতেন, আমরা নিজেরাই চা বানানো, পান বানানো— এগুলো করতাম। তখন আবার পরীক্ষার পড়াশোনা। পরীক্ষার পড়া পড়ব না বক্তৃতা শুনব। একটু পড়তে গিয়ে আবার দৌড়ে আসতাম কী হচ্ছে কী হচ্ছে, চিন্তা যে ৮ দফার দিকে নিয়ে যাবে কিনা, কিন্তু সেখানে দেখেছি আমার মায়ের সেই দৃঢ়তা, মিটিংয়ে রেজুলেশন হলো যে ৬ দফা ছাড়া হবে না।

নেতারা বিরক্ত হলেন, রাগ করলেন। অনেক কিছু ঘটনা আমার দেখা আছে। আব্বার কাছে দেখা করতে যখন কারাগারে যেতেন, তখন সব বলতেন। আমার মায়ের স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ, আমরা মাঝে মাঝে বলতাম তুমি তো টেপরেকর্ডার। মা একবার যা শুনতেন তা ভুলতেন না। আমাদের কতগুলো কায়দা শিখিয়েছিলেন যে জেলখানায় গিয়ে কী করতে হবে। একটু হৈচৈ করা, ওই ফাঁকে বাইরের সব রিপোর্ট আব্বার কাছে দেওয়া এবং আব্বার নির্দেশটা নিয়ে আসা, তারপর সেটা ছাত্রদের জানানো। স্লোগান থেকে শুরু করে সবকিছুই বলতে গেলে কারাগার থেকেই নির্দেশ দিয়ে দিতেন, সেভাবেই কিন্তু মা ছাত্রলীগকে কাজে লাগাতেন। ’৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ওনাকে নিয়ে গেল ক্যান্টনমেন্টে। আমরা কোনো খবর পেলাম না, তখন মায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যখন দেয় তখন কিন্তু আমার মা’কেও ইন্টারগেশন করেছে, যে কী জানে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে। উনি খুব ভালোভাবে উত্তর দিয়েছিলেন।

স্বাধীনতা আমাদের দরকার, আমার মনে আছে, ভুট্টোকে যখন আইয়ুব খান তাড়িয়ে দিল মন্ত্রিত্ব থেকে। ভুট্টো চলে এলে তখনকার দিনের ইস্ট পাকিস্তানে এসেই ছুটে গেল ৩২ নম্বর বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে।

আমাদের বসার ঘরটার নিচে যে ঘরটা আছে ওখানে আগের দিনে এ রকম হতো যে ড্রয়িং রুম, এরপর ডাইনিং রুম, মাঝখানে একটা কাপড়ের পর্দা। মা যখন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা আসতেন পর্দাটা টেনে ভিতরে বসে কথা বলতেন, বলতেন আমি পর্দা করি, আমাদের বলতেন ওদের সঙ্গে থাকব না, দেখা করব কেন।

আমার আব্বা যে মিনিস্টার ছিলেন, এমপি ছিলেন এমএলএ ছিলেন, করাচিতে যেতেন আমার মা কিন্তু জীবনে একদিনও করাচিতে যাননি, কোনো দিন যেতেও চাননি। উনি জানতেন, উনিই বেশি আগে জানতেন যে, এদেশ স্বাধীন হবে। এই যে স্বাধীনতার চেতনায় নিজেকে উদ্বুদ্ধ করা, এটা মায়ের ভিতরে তীব্র ছিল। একটা বিশ্বাস ছিল। আগরতলা মামলার সময় আব্বার সঙ্গে প্রথম আমাদের দেখা জুলাই মাসে। যখন কেস শুরু হলো, জানুয়ারির পর জুলাই মাসে প্রথম দেখা হয়, তার আগ পর্যন্ত আমরা জানতেও পারিনি। ওই জায়গাটা আমরা মিউজিয়াম করে রেখেছি। ক্যান্টনমেন্টে যে মেসে আব্বাকে রেখেছিল এবং যেখানে মামলা হয়েছিল সেখানেও মিউজিয়াম করে রাখা হয়েছে।

এরপরে আমাদের নেতারা আবারও উঠেপড়ে লাগলেন, আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকল, সেখানে যেতে হবে, না গেলে সর্বনাশ হবে। মা খবর পেলেন। আমাকে পাঠালেন, বললেন আমার সঙ্গে কথা না বলে কোনো সিদ্ধান্ত যেন উনি না দেন। আমাদের বড় বড় নেতারা সবাই ছিলেন, তারা নিয়ে যাবেন, আমার আব্বা জানতেন, আমার উপস্থিতি দেখেই বুঝে যেতেন যে মা কিছু বলে পাঠিয়েছেন। মা খালি বলে দিয়েছিলেন আব্বা কখনো প্যারোলে যাবে না যদি মুক্তি দেন তখন যাবে। সে বার্তাটাই আমি পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম, আর তার জন্য আমাদের নেতারা বাসায় এসে বকাঝকা। তুমি কেমন মেয়ে, তুমি চাওনা তোমার বাবা বের হোক জেল থেকে, মাকে বলতেন আপনি তো বিধবা হবেন। মা শুধু বলেছিলেন, আমি তো একা না, এখানে তো ৩৪ জন আসামি, তারা যে বিধবা হবে এটা আপনারা চিন্তা করেন না? আমার একার কথা চিন্তা করলে চলবে? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনই তো বিবাহিত। মামলা না তুললে উনি যাবেন না। তার যে দূরদর্শিতা রাজনীতিতে সেটাই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছে। কারণ সেদিন যদি প্যারোলে যেতেন তাহলে কোনো দিনই আর বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, এটা হলো বাস্তবতা। এরপর অসহযোগ আন্দোলনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি দেখেছি মায়ের দৃঢ় ভূমিকা। ৭ মার্চের ভাষণের কথা বারবারই আমি বলি, বড় বড় বুদ্ধিজীবীরা লিখে দিয়েছেন এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে, কেউ কেউ বলছেন এটাই বলতে হবে, না বললে সর্বনাশ হয়ে যাবে, এ রকম বস্তাকে বস্তা কাগজ আর পরামর্শ। গুরুত্বপূর্ণ কিছুতে যেতে হলে আমার মা কিন্তু আব্বাকে বলতেন কিছুক্ষণ তুমি নিজের ঘরে থাক, তাকে ঘরে নিয়ে তিনি একটা কথা বললেন যে, তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সে কথা বলবা। কারণ লাখো মানুষ সারা বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছে, হাতে বাঁশের লাঠি, নৌকার বৈঠা নিয়ে। আর এদিকে পাকিস্তানি শাসকরাও অস্ত্র-টস্ত্র নিয়ে বসে আছে এই বলে যে, বঙ্গবন্ধু কি নির্দেশ দেন। তারপর মানুষগুলোকে আর ঘরে ফিরতে দেবে না। নিঃশেষ করে দেবে। স্বাধীনতার স্বাদ বুঝিয়ে দেবে, এটাই ছিল পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত। আর সেখানে আমাদের কোনো কোনো নেতা বলে দিলেন যে, এখানেই বলে দিতে হবে যে, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। কেউ বলে, এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে।

মা বাবাকে বললেন যে, সারা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছ, তুমি জেল-জুলুম খেটেছ। দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন কীভাবে স্বাধীনতা এনে দেবেন সে কথাই তিনি ওই ভাষণে বলে এলেন। যে ভাষণ আজকে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ। আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে যত ভাষণ আছে, যে ভাষণ মানুষকে উজ্জীবিত করেছে সে ভাষণের শ্রেষ্ঠ একশটি ভাষণের মধ্যে এ ভাষণ স্থান পেয়েছে।   যে ভাষণ এদেশের মানুষকে প্রেরণা দিয়েছিল এবং এরপর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যখন তিনি এলেন ফোনে বলেছিলেন খসড়াটা ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চলে যাবে, ব্যবস্থাটা সবই করা ছিল, সবই উনি করে গিয়েছিলেন।

জানতেন যে, যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার বা হত্যা করতে পারে। মা সব সময় জড়িত আমার বাবার সঙ্গে, কোনো দিন ভয়ভীতি দেখিনি। যে মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তারপরই সেনাবাহিনী এসে বাড়ি আক্রমণ করল, ওনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল, পরের দিন এসে আবার বাড়ি আক্রমণ করল, আমার মা পাশের বাসায় আশ্রয় নিলেন। তারপর এ বাসা ও বাসা করে মগবাজারের একটা বাসা থেকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হলো। ১৮ নম্বর রোডের একতলা বাসায় রাখা হলো। খোলা বাড়ি। কিছু নাই, পর্দা নাই। রোদের মধ্যে আমাদের পড়ে থাকতে হয়েছে, দিনের পর দিন। মা’কে কিন্তু কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। সব সময় একটা আত্মবিশ্বাস ছিল, সাহস ছিল সে সাহসটাই দেখেছি। এরপর যেদিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর সারেন্ডার করে, আমরা কিন্তু সেদিন মুক্তি পাইনি, আমরা পেয়েছি এক দিন পরে ১৭ ডিসেম্বর। এখানে একটা ছবি দেখিয়েছে, মা দাঁড়িয়ে আছে মাঠের ওপর। মানুষের সঙ্গে হাত দেখাচ্ছে, ওটা কিন্তু বাংকার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ বাড়িতে মাটির নিচে বাংকার করেছিল, কাজেই ওই বাংকারের ওপর দাঁড়িয়ে যখন ইন্ডিয়ান আর্মি এসে পাকিস্তান আর্মিকে স্যারেন্ডার করে নিয়ে গেল হাজার হাজার মানুষ ওখানে চলে এলো, মা হাত নেড়ে দেখাচ্ছেন।

স্যারেন্ডার করার সময় গেটে যে সেন্ট্রি ছিল, আমরা ভিতরে বন্দী, আমরা তো বের হতে পারছি না, জানালা দিয়ে মা হুকুম দিচ্ছে। ওই সিপাহিটার নামও জানতেন, বলছেন যে হাতিয়ার ডালদো। ওই যে হাতিয়ার ডালদো প্রচার তখন তিনি জানতেন, বেচারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে জি মা জি বলে অস্ত্রটা নিয়ে ব্যাংকারে চলে গেল। কাজেই ওনার যে সাহসটা তা ওই সময়েও ছিল। ওই দিন রাতেও আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে, যেভাবে হোক আমরা বেঁচে গেছি।

আমার মা’র যে তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত আমরা দেখেছি, স্বাধীনতার পর তিনি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বৌ হিসেবে বিলাসী জীবনযাপনে ফিরে যাননি, ওই ধানমন্ডির বাড়িতে থেকেছেন, বলেছেন না আমার ছেলেমেয়ে বেশি বিলাসিতায় থাকলে ওদের নজর খারাপ হয়ে যাবে, অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে।

উনার জীবনে যেভাবে চলার ঠিক সেভাবেই উনি চলেছেন, কিন্তু স্বাধীনতার পর যেসব মেয়ে নির্যাতিত ছিল, নির্যাতিত মেয়েদের সাহায্য করা, তাদেরকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া। বোর্ডের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের যখন ব্যবস্থা হয় ওই মেয়েদের যখন বিয়ে দিতো, মা নিজেও তখন উপস্থিত থেকেছেন। নিজের হাতের নিজের গহনা, আমি আমারও গহনা অনেক দিয়ে দিয়েছিলাম, বলতাম, তুমি যাকে যা দরকার তা দিবা।

তিনি প্রচারবিমুখ ছিলেন, আমাকে একদিন বললেন, মাত্র ১৪ বছরের বাচ্চা মেয়ে তাকে যেভাবে অত্যাচার করেছে, তা দেখে তার খুব মন খারাপ হয়েছে। এভাবে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো, যে এসে যা চেয়েছে হাত খুলে তা দিয়ে দিয়েছে; দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল না। দেশের কথাই সব সময় চিন্তা করেছেন।

আমি অনেক স্মৃতির কথা বললাম এ কারণে যে আমি মারা গেলে অনেকেই হয়তো অনেক কিছু জানবে না। কাজেই এই জিনিসগুলো জানাও মানুষের দরকার। একজন যখন একটা কাজ করে তার পেছনে যে প্রেরণা শক্তি সাহস লাগে, মা সব সময় সে প্রেরণা দিয়েছেন, কখনো পিছে টেনে ধরেননি। যে আমার কী হবে, কী পাব, নিজের জীবনে তিনি কিছুই চাননি, আমি বলতে পারব না যে, কোনো দিন তিনি কিছু চেয়েছেন।

কিন্তু দেশটা স্বাধীন করা, দেশের মানুষের কল্যাণ কীভাবে হবে সে চিন্তাই তিনি সব সময় করেছেন। স্বাধীনতার পর অনেক সময় আব্বার সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তখন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ কী ভয়াবহ পরিস্থিতি, তখন সেই অবস্থায়ও তিনি খোঁজখবর রাখতেন। তথ্যগুলো আব্বাকে জানাতেন।

জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে ছিলেন, যখন ঘাতকরা আমার বাবাকে হত্যা করল তিনি তো বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি বলেছেন, ওনাকে যখন মেরে ফেলেছ আমাকেও মেরে ফেল, এভাবে নিজের জীবনটা উনি দিয়ে গেছেন। সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন, আমরা দুই বোন থেকে গেলাম, বিদেশে চলে গিয়েছিলাম মাত্র ১৫ দিন আগে। মাঝে মাঝে মনে হয় এভাবে বেঁচে থাকা যে কী কষ্টের, যারা আপনজন হারায় শুধু তারাই বুঝে।

আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার মায়ের যে অবদান রয়েছে দেশের স্বাধীনতার জন্য এবং দেশকে যে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এদেশের মানুষ আব্বার সঙ্গে একই স্বপ্নই দেখতেন যে, এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে, ভালোভাবে বাঁচবে। গরিব থাকবে না। আব্বা যে এটা করতে পারবেন এ বিশ্বাসটা সব সময় তার মাঝে ছিল। কিন্তু ঘাতকের দল তো তা দিল না।

কাজেই সে অসমাপ্ত কাজটুকু আমাকে করতে হবে, আমি সেটাই বিশ্বাস করি। এর বাইরে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তবে আমার মায়ের সারা জীবন দুঃখের জীবন, আর সেই সঙ্গে মহান আত্মত্যাগ তিনি করে গেছেন। আমি তার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।   ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাতবরণ করেছেন সবার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।

লেখক : প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest

নজরুল ইসলাম রাজু, পাটকেলঘাটা : পাটকেলঘাটা আল-আমিন ফাজিল মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলা থেকে গোপন বৈঠককালে থানা সভাপতি, কলারোয়া ইউনিয়ন সেক্রেটারীসহ ১০ শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৈঠককালে তাদের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ল্যাপটপ, মাসিক চাঁদা আদায়ের রশিদ, জেহাদি বই, নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত রিপোর্ট কার্ড। এব্যাপারে পাটকেলঘাটা থানায় একটি মামলা হয়েছে মামলা নং-৮, তাং-১১/০৮/১৭।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাটকেলঘাটা বলফিল্ড মোড়ের আল-আমিন ফাজিল মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার অফিস কক্ষের পাশের রুমে তালা থানা, কলারোয়া থানা ও পাটকেলঘাটা থানার শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতা সৃষ্টি ও সংগঠনের পরবর্তি কর্মীসূচি নিয়ে গোপন বৈঠকের সময় পুলিশী অভিযানে পাটকেলঘাটা থানা ছাত্র-শিবিরের সভাপতি নগরঘাটা গ্রামের মোনতাজ সরদারের পুত্র মেহেদী হাসান (২৫), কলারোয়া জয়নগর ইউনিয়ন ছাত্র-শিবিরের সেক্রেটারী নীলকন্ঠপুর গ্রামের এলাহী বক্স এর পুত্র মাসুম বিল্লাহ (২২), শিবির কর্মী নগরঘাটা গ্রামের আব্দুস সবুরের পুত্র আলমগীর হোসাইন (২৬), ইসলামকাটী গ্রামের আরিফুল মোড়লের পুত্র হাবিবুর মোড়ল (১৪), খলিশখালী রাঘবকাটী গ্রামের আলাউদ্দীন গাজীর পুত্র আশরাফুল মোড়ল (১৪), মাগুরা ডাঙ্গা গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের পুত্র হারুণ সরদার (২৩), ইসলামকাটী গ্রামের আকবর আলীর খার পুত্র নাজমুল হাসান (২০), বড়কাশীপুর গ্রামের হাসান আলীর খার পুত্র ইমামুল হোসেন (২০), বাউখোলা গ্রামের মফিজুল ইসলামের পুত্র ইয়াছিন আরাফাত (২৩) ও কাটাখালী ডাক্তার আব্দুল খালেকের পুত্র নাজমুল নাসার (২২) কে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে পাটকেলঘাটা থানায় সদ্য যোগাকৃত ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জানান, নাশকতা সৃস্টির জন্য শিবির কর্মীরা পাটকেলঘাটা আল-আমিন ফাজিল মাদ্রাসায় কিছু নেতাকর্মী গোপন বৈঠক করছে এরই প্রেক্ষিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে বৈঠকরত অবস্থায় ১০জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest

রাশিয়া বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ গ্রহণ আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে ব্রাজিলের। তাই ধারণা করা হচ্ছিল বাছাইপর্বে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার বিপক্ষের ম্যাচেও বিশ্রামে থাকবেন দলের সেরা তারকা নেইমার। তবে এ দুই দলের বিপক্ষে ঘোষিত দলে ফিরেছেন নেইমার। তার সঙ্গে আরও ডাক পেয়েছেন পিএসজিতে তার তিন স্বদেশী মারকুইনহোস, থিয়াগো সিলভা ও দানি আলভেস।

নেইমারকে নিয়ে ব্রাজিল কোচ তিতে বলেন, বার্সেলোনা থেকে নেইমারের পিএসজিতে যাওয়া নিয়ে যে নাটক হয়েছে তার সঙ্গে ব্রাজিল দলের কোনো সম্পর্ক নেই। সে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত। আর এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ক্লাবে তাকে মানিয়ে নিয়ে তার সেরাটায় উঠে আসতে দিন।

তিনি আরও বলেন, ‘পিএসজির নেইমার নয়, আমরা ব্রাজিলের নেইমারকে নিয়েই শুধু মাথা ঘামাব।’

উল্লেখ্য, গত জুনে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরে যাওয়া প্রীতি ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন নেইমার। অস্ট্রেলিয়াকে ৪-০ গোলে হারানোর ম্যাচেও খেলেননি তিনি। আগামী ৩১ আগস্ট ইকুয়েডর এবং ৫ সেপ্টেম্বর কলম্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest

হজ এজেন্সি গুলোর গাফিলতিতে এবারের হজযাত্রায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ভিসা হওয়ার পরও নির্ধারিত কোটার শতকরা ৯০ ভাগ হজযাত্রী সৌদি আরব পাঠায়নি ৩৭৭টি হজ এজেন্সি। জানা গেছে, চলতি বছর মোট ৩৭৭টি এজেন্সির সর্বোচ্চ ২৬৪ জন থেকে সর্বনিম্ন ছয়জন পর্যন্ত হজযাত্রীর ভিসা থাকার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে যাত্রী না পাঠানোর ফলে হজ ফ্লাইটের সিডিউলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে ২৭ টি। এর মধ্যে ২৩টিই বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। এভাবে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন হজযাত্রীরা।

এ দিকে ভিসা থাকার পরও সৌদি আরবে হাজী না পাঠানোয় ৩৭৭টি হজ এজেন্সিকে আশকোনা হজ অফিসে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজ ফ্লাইট বাতিলে এজেন্সিগুলোকে দায়ী করে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দায়ী এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোসাদ্দিক আহম্মেদ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
ছবি কথা বলে

ছবি কথা বলে

কর্তৃক Daily Satkhira

ছবিটি ঐতিহাসিক। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী হিসেবে যার খ্যাতি ছিল সেই ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছবির আরেকজন হচ্ছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিপত্নী শুভ্রা মুখার্জি। সম্প্রতি ছবিটি প্রকাশ করেছেন প্রণবকন্যা শরমিষ্ঠা মুখার্জি

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest

ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান অবৈধ ভাবে বসবাস করে। এবার তাদের দেশছাড়া করতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্রীয় সরকার।
এজন্য সরকার বিস্তারিত নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে বলেও বুধবার রাজ্যসভায় জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজু। অবৈধ ভাবে ভারতে বসবাস করা এই মুসলমানদের বিতাড়ন পর্ব ধারাবাহিক ভাবে চলবে বলেও জানিয়েছেন রিজিজু।

রিজিজু লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুসারে অবৈধ ভাবে ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়িত করা হবে। এর জন্য কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলো টাস্ক ফোর্স গঠন করারও নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। প্রতিটি জেলা ধরে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী মুসলমানদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মায়ানমার থেকে ভারতে এসে বসবাস করা রোহিঙ্গা মুসলমানের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ হাজার। সমুদ্র পথ ছাড়াও চিন ও বাংলাদেশ হয়েও রোহিঙ্গারা ভারতে প্রবেশ করে। শুধু মাত্র জম্মুতেই সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী বাস করে। বাংলাদেশেও তিন লাখের উপরে এমন নাগরিক রয়েছে।

সরকারি হিসেব বলছে, গত দু’বছরে দেশে অবৈধ রোহিঙ্গা মুসলমানের সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংঘাতের জেরে ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা ওই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এখন মায়ানমার সরকারও এই মুসলমানদের সে দেশের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেয় না। ১৯৮২ সালে মায়ানমার নতুন নাগরিক নীতি চালু করলে রোহিঙ্গাদের কার্যত কোনও দেশ নেই।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। সম্প্রতি প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা অর্থ আত্মসাতের মূল নায়ক।’ এদিকে, সারা দেশে প্রাথমিকের প্রায় দুই লাখ স্কুল শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে না । দেশের বিভিন্ন উপজেলার ৭৭টি স্কুলে এই শিশুরা অধ্যয়ন করছে। উপবৃত্তি প্রকল্প পরিচালকের অবহেলা ও অর্থ আত্মসাতে স্কুল শিক্ষকদের জড়িত থাকায় এই শিশুরা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সারা দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের উপবৃত্তি উপকারভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের পরিচালক মহেশ চন্দ্র রায় বলেন, মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বৃত্তির অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে। নানা জটিলতার কারণে ৭৭টি স্কুলের দুই লাখ শিশুকে বৃত্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জুলাই থেকে উপবৃত্তির আওতায় সকল পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষার্থীদের আনা হবে। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি। কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest