সর্বশেষ সংবাদ-
কালিগঞ্জে পুকুরের পানিতে দুই শিশুর মৃত্যুদেবহাটায় ৪০ জন উপকার ভোগীর মাঝে ছাগল বিতরণদেবহাটার সরকারি কর্মকর্তা-সুধীজনদের সাথে ডিসির মতবিনিময়সাতক্ষীরার ১৮৫টি ভোটকেন্দ্রের স্কুল সংস্কারে বরাদ্দ প্রায় ৬৪ লাখ টাকাসাতক্ষীরা জেলা রোভারের ৪১ তম কোর্স ফর রোভারমেট এর মহাতাঁবু জলসাশ্যামনগরে বুনো শাকের রান্না প্রতিযোগিতাসাতক্ষীরায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে রাস্তা সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনতারেক রহমানের জন্মদিনে সাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের শিক্ষা উপকরণ বিতরণদেবহাটায় উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভামহেশ্বরকাটি বাজারে বিএনপির প্রার্থী কাজী আলাউদ্দিনের লিফলেট বিতরণ

পিএলও-র নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাস

ফিলিস্তিনিদের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদ আব্বাস।

শুক্রবার পিএলওর নির্বাহী কমিটির সদস্যরা আলোচনার ভিত্তিতে মাহমুদ আব্বাসকে কমিটির প্রধান নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত নেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের জবাবে আব্বাসের নেওয়া কৌশলই তাকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আব্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়াসের আবেদ রাব্বো এবং সাবেক প্যালেস্টিনিয়ান কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ কুরেয়িকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
অবশেষে জয় পেল মুস্তাফিজের মুম্বাই

কিংসদের হারিয়ে নাইটদের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে নামবে রোহিত অ্যান্ড কোং। শুক্রবার হোলকার স্টেডিয়ামে কিংস ইলেভেনের বিরুদ্ধে ১৭৫ রান তাড়া করতে নেমে ছয় উইকেট ম্যাচ জিতে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

মুম্বাইয়ের জয়ে বড় ভূমিকা নেয় পান্ডিয়া। প্রথমে হার্দিকের ১৩ বলে ২৩ পরে কুণালের ১২ বলে অপরাজিত ৩১ রানের দুরন্ত ইনিংসে একাদশ আইপিএলে লড়াই জারি রাখল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। এর জয়ের ফলে এক লাফে আট থেকে পাঁচ নম্বরে উঠে এল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুটা ভালো হয়নি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সেরও। মন্থর পিচে পাওয়ার প্লে-তে লুইসের উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৯ রান তোলে মুম্বাই। তারপর সুর্যকুমার যাদব দুরন্ত হাফ-সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ে ফেরে রোহিত অ্যান্ড কোং। কিন্তু হাফ-সেঞ্চুরির পর ডাগ-আউটে ফেরেন সূর্যকুমার। ৪২ বলে তিনটি ছয় ও হাফ-ডজন বাউন্ডারি-সহ ৫৭ রান করেন তিনি। এরপর ইশান কিষান (১৯ বলে ২৫) এবং হার্দিক পান্ডিয়া ১৩ বলে ২৩ রানের ইনিংসে রান ও বলের ব্যবধান কমায় মুম্বাই।

এরপর ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা ও কুনাল পান্ডিয়া দলকে বৈতরণী পার করানোর সংকল্প নেয়। রোহিত শান্ত থাকলেও কুণানের ১২ বলে ৩১ রানের ইনিংসে এক ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ পকেটে পুরে নেয় মুম্বাই। দুটি ছক্কা ও চারটি চার মারেন কুণাল। স্ট্রাইক-রেট ২৫৮.৩৩। ১৫ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন রোহিত।

প্রথমে ব্যাটিং করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সামনে ১৭৫ রানে টার্গেট রাখল প্রীতির পঞ্জাব। শেষ ওভারে মার্কাস স্টইনিসের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে বড় রান তুলল কিংস ইলেভেন। ইনিংসের শেষ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার বিরুদ্ধে দুটি ছয় ও দু’টি চার হাঁকিয়ে ২২ রান তোলেন স্টইনিস৷

এদিন শুরুতে অবশ্য চেনা ছন্দে দেখা যায়নি কিংস ওপেনিং জুটিকে৷ ২০ বলে ২৪ রান করে ডাগ-আউটে ফেরেন লোকেশ রাহুল৷ শুরুতে শান্ত ছিলেন ক্যারিবিয়ান দৈত্য৷ পাওয়ার প্লে (প্রথম ৬ ওভার) মাত্র ৪৯ রান তোলে পঞ্জাব। তার পরের ওভারেই আউট হন রাহুল।

‘গেইল ঝড়’ উঠলে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। হাফ-সেঞ্চুরির পরই ডাগ-আউটে ফেরেন গেইল। ৪০ বলে দু’টি ছয় ও ছ’টি বাউন্ডারি-সহ ৫০ রান করেন বাঁ-হাতি ওপেনার।

এর পর থেকে নিয়মিত উইকেট হারানোয় চাপে পড়ে যায় কিংস ব্যাটিং। চূড়ান্ত ব্যর্থ যুবরাজ সিং। এদিন মাত্র ১৪ রান করে রান-আউট হন বাঁ-হাতি। চলতি আইপিএলে যুবির সর্বোচ্চ স্কোর ২০। শেষ দিকে করুণ নায়ার ও স্টইনিসের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দেড়শোর গণ্ডি টপকায় পাঞ্জাব। শুধু তাই নয়, শেষ ওভার ২২ রান তুলে মুম্বইকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দেয় প্রীতির সৈন্যরা। ১৫ মাত্র ২টি ছয় ও ২টি চার-সহ ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন স্টইনিস৷ আর ১২ বলে ডাবল ছক্কায় ২৩ রান করেন নায়ার।

এই জয়ের ফলে ৯ ম্যাচে তিনটিতে জয় পেল মুম্বাই। আগের ম্যাচে চিন্নাস্বামীতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে হেরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল রোহিতদের। এদিন তাই জয় ছাড়াই কিছু ভাবেনি রোহিতবিগ্রেড।

শেষ পর্যন্ত কিংসদের হারিয়ে লড়াইয়ে ফিরল মুম্বাই। কিংসদের হারিয়ে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে রবিবার ওয়াংখেড়েয় কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে নামবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
পাহাড়ের ৬ হত্যায় মামলা হয়নি

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের সামনে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) এর আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমাসহ ৫ জন।

পাহাড়ি দুই আঞ্চলিক দলের এই শীর্ষস্থানীয় দুই নেতাসহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির।

তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নানিয়ারচর উপজেলায় আঞ্চলিক দুইটি দলের শীর্ষ দুই নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমরা সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। এ দুই নেতা হত্যায় এখনও পর্যন্ত তাদের পরিবার কিংবা নিজ দলের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

এদিকে পাহাড়ে এ দুই আঞ্চলিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে হত্যার অভিযোগে ইউপিডিএফকে (প্রসিত) দায়ী করছেন সংগঠন দুইটির নেতরা। তবে এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ইউপিডিএফের (প্রসিত) শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা লিটন চাকমা বলেন, শক্তিমান চাকমাকে হত্যার পর তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে একক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ইউপিডিএফ (প্রসিত) একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) শীর্ষ নেতা সুদর্শন চাকমা বলেন, আগে থেকেই আমাদের দলের শীর্ষ নেতা শক্তিমান চাকমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে ইউপিডিএফের (প্রসিত) সন্ত্রাসীরা। তারা পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবাহ্যত রাখার জন্য মূলত এমন হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।

অপরদিকে তাদের এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট মন্তব্য করে ইউপিডিএফের (প্রসিত) অন্যতম সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, আমরা মানুষ হত্যায় বিশ্বাসী নয়। কোনো মানুষ এভাবে মৃত্যুবরণ করুক এটা আমাদের কাম্য নয়। এ সকল ঘটনার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি আরও বলেন, তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার কোনো দল নেই। সে একজন সন্ত্রাসী। সন্ত্রসী হওয়ার ফলে তার অনেক শত্রু থাকতে পারে। তারাই এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা।

অন্যদিকে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা হত্যার ঘটনাকে তাদের নিজ দলের কাজ বলে মন্তব্য করে মাইকেল চাকমা বলেন, শক্তিমানের অনেক আগে থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিলো। যার প্রমাণ আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে পেয়েছি। আমরা শুনতে পেয়েছি বেশ কয়েকদিন আগে এক ইউপি সভায় দলবল নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার কথা ভাবছিলেন শক্তিমান। নিজ দলের ক্ষতি কেউ চাই না। সেজন্য তারা নিজেরা এমন কর্মকাণ্ড করতে পারে বলে আমি মনে করি।

এছাড়া আঞ্চলিক রাজনৈতিক সুবিধার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে তারা কথা বলছে বলেও মন্তব্য করেন এই শীর্ষস্থানীয় নেতা।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
কার্ল মার্কস ও মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতা

‘‘১৪ই মার্চ বেলা পৌনে তিনটায় পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক চিন্তা থেকে বিরত হয়েছেন। মাত্র মিনিট দুয়েকের জন্য তাঁকে একা রেখে যাওয়া হয়েছিল। আমরা ফিরে এসে দেখলাম যে তিনি তাঁর আরাম কেদারায় শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছেন কিন্তু ঘুমিয়েছেন চিরকালের জন্য।’’

এই মানুষটির মৃত্যু ইতিহাস বিজ্ঞানের অপূরণীয় ক্ষতি বলে এঙ্গেলস বর্ণনা করেছিলেন। কেন? তার উত্তরে এঙ্গেলস উক্ত বক্তৃতায় বলেছিলেন-‘‘ডারউইন যেমন জৈব প্রকৃতির বিকাশের নিয়ম আবিষ্কার করেছিলেন তেমনি মার্কস আবিষ্কার করেছেন মানুষের ইতিহাসের বিকাশের নিয়ম, মতাদর্শের অতি নিচে এতদিন লুকিয়ে রাখা এই সহজ সত্য যে, রাজনীতি, বিজ্ঞান, কলা, ধর্ম ইত্যাদি চর্চা করতে পারার আগে মানুষের প্রথমে চাই খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, পরিচ্ছদ। সুতরাং প্রাণধারণের আশু বাস্তব উপকরণের উৎপাদন এবং সেইহেতু কোনো নির্দিষ্ট জাতির বা নির্দিষ্ট যুগের অর্থনৈতিক বিকাশের মাত্রাই হলো সেই ভিত্তি যার ওপর গড়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট জাতির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইনের ধ্যানধারণা, শিল্পকলা, এমনকি তাদের ধর্মীয় ভাবধারা পর্যন্ত এবং সেই দিক থেকেই এগুলির ব্যাখ্যা করতে হবে, এতদিন যা করা হয়েছে সেভাবে উলটো দিক থেকে নয়।’’

১৮৮৩ সালের ১৭ই মার্চ কার্ল মার্কেসর মৃত্যুর ৩দিন পর লন্ডনের হাইগেট সমাধিক্ষেত্রে তাঁর সমগ্র জীবনের বন্ধু ও সহযোদ্ধা ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস বক্তৃতায় উপরোক্ত কথাগুলি বলেছিলেন।

বিগত প্রায় ১৬৯ বছর ধরে সমগ্র পৃথিবীতে মানব চিন্তন প্রক্রিয়াকে সর্বাধিক প্রভাবিত করেছেন যিনি তিনি হলেন কার্ল মার্কস। ১৮১৮ সালের ৫ মে অধুনা জার্মানিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই বছর সমগ্র দুনিয়ার শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রামরত সমস্ত মানুষ কার্ল মার্কসের দ্বিশততম জন্মদিবস পালন করছেন।

মার্কসের জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১৮১৮ সালের ৫ই মে প্রুশিয়ার ট্রিয়ের শহরে কার্ল মার্কস জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন ইহুদি। তিনি ছিলেন আইনজীবী।

ট্রিয়ের শহরে শিক্ষালাভের পর মার্কস প্রথমে ‘বন’ পরে ‘বার্লিন’ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, ইতিহাস ও দর্শন — পড়াশোনা করেন। ১৮৪১ সালে মার্কসের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হলে ‘এপিকিউরাসের’ দর্শন সম্বন্ধে তিনি একটি ‘থিসিস’ রচনা করেন। এই সময়ে মার্কস হেগেলের মতবাদের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এবং ‘বামপন্থী হেগেলীয়’ চক্রের সদস্য ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে মার্কস ‘বন’-এ এলেন অধ্যাপক হওয়ার আশায়। কিন্তু সরকার যেমন আগে ফয়েরবাখ ও ব্রুনোকে অধ্যাপনার অনুমতি দেয়নি, তেমন মার্কসকেও দিলো না। বস্তুবাদের প্রবক্তা ফয়েরবাখের “Principles of Philosophy of the Future” প্রকাশিত হওয়ার পর মার্কসসহ ‘বামপন্থী হেগেলীয়রা’ ফয়েরবাখের মতবাদের সমর্থক হন। সেই সময় কোলনে যে পত্রিকাটি (Rheinische Zeitung) প্রকাশিত হতো, মার্কস তাতে লিখতে লাগলেন। ১৮৪২-এ মার্কস সে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হলেন। মার্কসের সম্পাদনায় এই পত্রিকার বিপ্লবী গণতান্ত্রিক ঝোঁক ক্রমশ পরিস্ফুট হতে থাকলে, সরকার এই পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তখন মার্কস সম্পাদকের দায়িত্ব ত্যাগ করেন।

১৮৪৩ সালে মার্কস জেনিকে বিবাহ করেন। ১৮৪৩ সালের শরৎকালে তিনি প্যারিসে যান একটি পত্রিকা প্রকাশের জন্য। একজন ‘‘বামপন্থী হেগেলীয়’’ আর্নল্ড রির্ডজের সাহায্যে এখান থেকে মার্কস যে পত্রিকাটি প্রকাশ করেন, তার মাত্র একটি সংখ্যাই বেরোয়। কারণ সেগুলি জার্মানিতে গোপনে প্রচার করা অসম্ভব হয়ে ওঠে এবং রির্ডজের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য দেখা দেয়।

১৮৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস প্যারিসে আসেন এবং তখন থেকেই মার্কসের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাঁরা দুজনে প্যারিসে তদানীন্তন বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সমাজতন্ত্রবাদের নামে যে সব ভুয়ো মতবাদ তখন প্রচলিত ছিল, তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হন। তাঁরা দুজনে তখনই সর্বহারার বিপ্লবী সমাজতন্ত্রবাদের তত্ত্ব ও কৌশল রচনায় আত্মনিয়োগ করেন।

প্রুশিয়ার সরকারের চাপে ১৮৪৫ সালে মার্কসকে বিপজ্জনক বিপ্লবী এই অজুহাতে প্যারিস থেকে নির্বাসিত করা হয়। তিনি ব্রাসেলসে যান। ১৮৪৭ সালে মার্কস ও এঙ্গেলস ‘কমিউনিস্ট লিগ’ নামে একটি গোপন দলে যোগদান করেন। ১৮৪৭ সালেই ঐ সংগঠনের দ্বিতীয় কংগ্রেস হয় লন্ডনে। সেই কংগ্রেসে মার্কস ও এঙ্গেলসের বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। এই কংগ্রেসের অনুরোধে তাঁরা ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ রচনা করেন, যা ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। তাঁদের এই সৃষ্টি এক নতুন চিন্তা, এক নতুন পথের নিশানা সকলের সামনে তুলে ধরে। অসীম প্রতিভাবান এই দুই পুরুষের কাছ থেকে মানুষ পেল : জগত সম্পর্কে এক নতুন ধারণা, বস্তুবাদ সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা, সমাজজীবনে বস্তুবাদের প্রয়োগ তত্ত্ব, বিকাশের বৈজ্ঞানিক দ্বন্দ্ব তত্ত্ব, শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্ব এবং সর্বহারার সাম্যবাদী সমাজের গ্রষ্টারূপে ঐতিহাসিক বৈপ্লবিক ভূমিকা।

১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিপ্লবের সূচনাতেই মার্কসকে বেলজিয়াম থেকে নির্বাসিত করা হলো। তিনি প্যারিসে এলেন, তারপর জার্মানির কোলনে গেলেন। সেখানে ‘নিউ জাইটুং’ পত্রিকা তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হলো। মার্কসের নতুন তত্ত্বের সত্যতা নির্ধারিত হলো – ১৮৪৮-৪৯ সালে ইউরোপের বৈপ্লবিক ঘটনাবলীর দ্বারা। প্রতিবিপ্লবীরা শঙ্কিত হলো। তারা প্রথমে মার্কসকে আদালতে হাজির করালো। কিন্তু আদালত মুক্তি দিলে, ১৮৪৯-এর ১৬ই মে জার্মানি থেকে তাঁকে নির্বাসন দেওয়া হলো। প্রথমে মার্কস প্যারিসে গেলেন, সেখানে থেকেও নির্বাসিত হলেন। তারপর গেলেন লন্ডনে। তখন থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত লন্ডনেই তিনি ছিলেন।

মার্কসের রাজনৈতিক নির্বাসিত জীবন খুবই কষ্টকর ছিল। মার্কস এবং তাঁর পরিবারবর্গকে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাতে হতো। এঙ্গেলস যদি এই সময়ে মার্কসকে নিয়মিত নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য না করতেন, তাহলে মার্কস শুধু ‘ক্যাপিটাল’ রচনা শেষ করতে পারতেন না, তাই নয়, তাঁকে অভাব-অনটনের মধ্যে ভেঙে পড়তে হতো। মার্কস এই সময়ে তাঁর বস্তুবাদী তত্ত্বের আরও বিকাশ সাধন করেন এবং অনেকগুলি অমূল্য রচনায় ও অর্থনীতি বিষয়ে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। যার ফলে তৈরি হয় : A Contribution to the Critique of Political Economy (১৮৫৯) এবং ক্যাপিটাল, ১ম খন্ড (১৮৬৭)।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ দশকে ইউরোপে গণতান্ত্রিক আন্দোলন মাথা তোলে। মার্কস আন্দোলনের কাজে নিজেকে নিয়োগ করেন। ১৮৬৪ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর লন্ডনে International Working men’s Association গঠিত হয়। এটিই হলো প্রথম আন্তর্জাতিক। মার্কসই ছিলেন এই সংগঠনের প্রাণপুরুষ। এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের বহু ঘোষণা, প্রস্তাব, ম্যানিফেস্টো প্রভৃতি মার্কসেরই রচনা। এই সময়ে মার্কস যেমন বিভিন্ন দেশের শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামগুলিকে একই ধরনের কৌশলের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার প্রাণপণ চেষ্টা করেন, তেমনই ভুল, অবৈজ্ঞানিক মতবাদগুলির বিরুদ্ধেও নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালান। ‘প্যারি কমিউনে’র পতনের পর (১৮৭১) মার্কস তাঁর বিখ্যাত রচনা The Civil War in France প্রকাশ করেন। ১৮৭২ সালে হেগ কংগ্রেসের পর প্রথম আন্তর্জাতিক ‘জেনারেল কাউন্সিল’ নিউইয়র্কে স্থানান্তরিত হয়। মার্কসের নেতৃত্বে এই প্রথম আন্তর্জাতিক এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এই আন্তর্জাতিক পৃথিবীর সকল দেশের শ্রমিক আন্দোলনে আরও অগ্রগতির পথ রচনা করে। এই আন্তর্জাতিক এমন একটি যুগের সূচনা করে, যে যুগে গণ-সমাজতন্ত্রবাদী দল প্রতিষ্ঠার পথে বিভিন্ন দেশের শ্রমিকশ্রেণী অনেকদূর এগিয়ে যায়। প্রথম আন্তর্জাতিকের এই অবদান অবিস্মরণীয়।

‘আন্তর্জাতিক’-এর জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং তত্ত্বগত গবেষণার কাজে অধিকতর কঠোর পরিশ্রমের ফলে মার্কসের স্বাস্থ্য এই সময়ে ভেঙে পড়ে। ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়েও ক্যাপিটালের পরবর্তী খন্ডগুলি সমাপ্ত করার জন্য তিনি এই সময় বিভিন্ন দেশের প্রভূত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং সেগুলি পড়বার জন্য অনেকগুলি ভাষা শিক্ষা করেন। কিন্তু তাঁর জীর্ণ স্বাস্থ্য শেষ পর্যন্ত তাঁকে ক্যাপিটাল সমাপ্ত করতে দেয় না।

১৮৮১ সালের ২রা ডিসেম্বর তাঁর স্ত্রী মারা যান। আর ১৮৮৩ সালের ১৪ই মার্চ তাঁকে তাঁর প্রিয় আরাম-কেদারায় চিরনিদ্রায় শায়িত দেখা যায়।

প্রকৃত সমাজবিজ্ঞানী

মানব সমাজের বিকাশধারাকে বিজ্ঞানের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করার কাজ প্রথম করলেন কার্ল মার্কস। ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের সঙ্গে একযোগে তিনি সমাজের বিকাশধারার চর্চাকে বিজ্ঞানে রূপান্তরিত করলেন। সমাজ সম্পর্কিত রূঢ় নির্মম সত্যগুলিকে আড়াল থেকে প্রকাশ্যে আনলেন কার্ল মার্কস, সেইদিক দিয়ে তিনি ছিলেন প্রথম প্রকৃত অর্থে সমাজবিজ্ঞানী। কমরেড লেনিনের কথায়, ‘‘মানব সমাজের অগ্রণী ভাবনায় যেসব জিজ্ঞাসা আগেই দেখা দিয়েছিল মার্কস তারই জবাব দিয়েছেন।’’

তিনটি উৎসকে ভিত্তি করে মতবাদ প্রতিষ্ঠা করলেন

অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীতে দর্শনের ক্ষেত্রে যে বিপুল অগ্রগতি ঘটেছিল মার্কস ও এঙ্গেলস তাকে আত্মস্থ করেছিলেন। জার্মান চিরায়ত দর্শন বিশেষ করে হেগেলীয় তত্ত্ব ও ফয়েরবাখের বস্তুবাদ মতবাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উৎসের ভূমিকা পালন করেছে। জার্মান দর্শন প্রধানত হেগেলের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দ্বান্দ্বিক তত্ত্বের কথা এক্ষেত্রে বিশেষ করে উল্লেখ করা প্রয়োজন। দ্বান্দ্বিক তত্ত্ব হলো বিকাশের গভীরতম, পূর্ণতম, একদেশদর্শিতা বর্জিত তত্ত্ব। তবে জার্মান দর্শনে এই দ্বান্দ্বিক তত্ত্ব মাথা নিচে বা পা ওপরে করে দাঁড়িয়েছিল। দ্বান্দ্বিক তত্ত্বকে সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসার ঐতিহাসিক ভূমিকা মার্কসই পালন করেছিলেন।

মার্কসের পূর্বে অর্থশাস্ত্রের বিকাশ ঘটেছিল তৎকালীন সর্বাধিক অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশ ইংল্যান্ডে। অ্যাডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকাডো মূল্যের শ্রম তত্ত্ব প্রকাশ করেন। বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদদের সব থেকে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল এই যে তারা পণ্যের সাথে পণ্যের বিনিময়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। মানুষের মধ্যেকার সম্পর্কের বিষয়টি তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল।

সামন্ততন্ত্রের পতনের পর মুক্ত দুনিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মেহনতী মানুষের ওপর পীড়ন ও শোষণের নতুন ব্যবস্থাই হলো পুঁজিবাদ। সমাজতান্ত্রিক মতবাদ নানাভাবে উপস্থিত হতে শুরু করে। শোষণহীন ও মুক্ত সমাজই হলো সমাজতন্ত্র। কিন্তু এই সমস্তই ছিল ইউটোপীয় সমাজবাদ। পুঁজিবাদী সমাজের সমালোচনা করেছে তার অবসান ঘটিয়ে এক উন্নততর সমাজ ব্যবস্থার কল্পনা করলেও কি উপায়ে তা প্রতিষ্ঠিত হবে সেই পথ দেখাতে পারেনি এই ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব।

মার্কসীয় মতবাদের তিনটি অঙ্গ

দর্শন, অর্থনীতি ও শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্ব- এই তিনটি অঙ্গ নিয়ে মার্কসবাদ

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে বস্তুবাদই একমাত্র সঙ্গতিপরায়ণ দর্শন হিসাবে দেখা দিয়েছে। বস্তুবাদ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সমস্ত সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ বিশ্বস্ত এবং কুসংস্কার, ভন্ডামির তা চরম শত্রু। মার্কসীয় দর্শন শুধুমাত্র বস্তুবাদই নয়, দ্বান্দ্বিক তত্ত্বের সাথে তাকে যুক্ত করেছেন। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ হলো মার্কসীয় দর্শন। আধুনিক বিজ্ঞানের সমস্ত আবিষ্কারের দ্বারা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ সমর্থিত হয়েছে।

মার্কসীয় অর্থনীতির মধ্য দিয়ে কি করে পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করে দেখানো হলো। পুঁজির কাছে শ্রমিকদের পরাধীনতা বাড়িয়ে তোলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। তার ফলেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্মিলিত শ্রমের শক্তি গড়ে ওঠে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উৎপাদনের নৈরাজ্য, সঙ্কট, বাজারের জন্য প্রতিযোগিতা এবং জনসাধারণের ব্যাপক অংশের মধ্যে জীবনধারণের অনিশ্চয়তা অবশ্যম্ভাবী। সামাজিক উৎপাদন ও ব্যক্তিগত পুঁজিবাদী মালিকানা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মৌলিক দ্বন্দ্ব।

মার্কসীয় মতবাদকে শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্ব বলেও অনেক সময়ে অভিহিত করা হয়। সমস্ত নৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক বচন ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতির পেছনে কোন না কোন শ্রেণীর স্বার্থ রয়েছে। শোষকশ্রেণীর স্বার্থ এবং শোষিতশ্রেণীর স্বার্থ। শোষিতশ্রেণীর সংগ্রামই একমাত্র শোষকশ্রেণীর প্রতিরোধকে চূর্ণ করতে পারে। পুরাতনের উচ্ছেদ ও নতুনের সৃষ্টি শ্রেণীসংগ্রামের মধ্য দিয়েই সম্ভব। প্রলেতারিয়েতের জয়লাভ ঘটাবে শ্রেণীসংগ্রাম।

একজন দক্ষ ও বিপ্লবী নেতা

দুনিয়াটাকে পরিবর্তিত করার লক্ষ্য নিয়ে মার্কস তার মতবাদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়েছিলেন। তাই বিপ্লবী তত্ত্বের সাথে সাথে বিপ্লবী সংগ্রাম সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। কমিউনিস্ট লিগ, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন এই সমস্ত সংগঠন গড়ে তোলা ও তা পরিচালনায় তিনি ছিলেন কর্ণধার। শ্রমিকশ্রেণীকে সংগঠিত করা ছিল তাঁর সমগ্র জীবনের লক্ষ্য।

বর্তমান সময়ে মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতা

আমরা এই সময়ে কার্ল মার্কসের জন্মের দ্বিশতবর্ষ, ক্যাপিটাল প্রথম খন্ডের ১৫০বছর এবং নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন করছি। এগুলির ঐতিহাসিক প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাথায় রাখতে হবে সেই সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের পরিবর্তন ঘটে গেছে। কার্ল মার্কসের সময়কালে অর্থাৎ ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুঁজিবাদ ছিল শিল্পপুঁজি নির্ভর। ফরাসি বিপ্লবে সামন্ততন্ত্রকে উচ্ছেদ করে পুঁজিবাদ যখন ক্ষমতায় আসে তখন শিল্পপুঁজি ছিল প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করে লগ্নিপুঁজির একচেটিয়া যুগ প্রতিষ্ঠা পায়। পুঁজিবাদের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের মৌলিক ৫টি বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা করেছিলেন লেনিন। তিনি দেখিয়েছিলেন, সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জন্য কেন যুদ্ধ অনিবার্য। তিনি এটাও দেখিয়েছিলেন যে, সাম্রাজ্যবাদী শৃঙ্খলের দুর্বলতম অংশে আঘাত করে অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ রাশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করা সম্ভব। আর একবিংশ শতাব্দীতে এখন আমরা যে পুঁজিবাদকে দেখতে পাচ্ছি তাকে উগ্র উদারবাদী অর্থনীতি বলতে পারি যেখানে পুঁজি শুধু উদ্বৃত্ত মূল্য আত্মসাৎ করে নয়, সরাসরি লুটের মাধ্যমে মুনাফা করছে। পুঁজিপতি, শাসকদল ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে আঁতাত গড়ে এই লুটপাট চলছে যাকে আমরা ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বা সোজা কথায় ধান্দার পুঁজিবাদ বলছি। এটাই বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলা প্রবণতা।

আমরা যারা মার্কসবাদী তারা জানি অর্থনীতিই সমাজের মূল কাঠামো তৈরি করে এবং সেই কাঠামোর ওপরে নির্ভর করেই সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি নানা উপরিকাঠামো গড়ে ওঠে। যদিও উপরিকাঠামোও কাঠামোর ওপরে প্রভাব ফেলে। একথা স্পষ্ট করে বলা যায় যে, দুনিয়াজোড়া এই লুটের অর্থনীতির কাঠামোর ওপরেই উপরিকাঠামোয় রাজনীতিতে একটি নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দেশে দেশে চরম দক্ষিণপন্থা ও স্বৈরতন্ত্রের উত্থান দেখা যাচ্ছে। এদের উত্থানকে অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। এই চরম দক্ষিণপন্থীরা মানুষের সমর্থন পেতে জনমোহিনী স্লোগান                                                                   ব্যবহার করছে। পোস্ট ট্রুথ যুগে অসত্যের নির্মাণ করা হচ্ছে এই লক্ষ্যে। অসত্য নির্মাণ এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে বহু মানুষ কিছু পাওয়ার আশা করছেন, আবার স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করলে সেই সুযোগ হারানোরও ভয় করছেন। বিশ্বজুড়ে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন ধনকুবের কেন মানুষের সমর্থন পেলেন? ব্রিটেনের মানুষ কেন ব্রেক্সিটের পদক্ষেপকে সমর্থন করলেন? এর উত্তর রয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে। প্রায় এক দশক আগে শুরু হওয়া বিশ্ব আর্থিক সংকট এখনও বহাল রয়েছে। উন্নত পুঁজিবাদীদেশগুলির অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার এখনও সংকটের পূর্বের স্তরে পৌঁছাতে সমর্থ হয়নি। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন তাই পুঁজিবাদী সঞ্চয়ের বর্বর পদ্ধতিকে তীব্রতর করেছে। একে নয়া উদারবাদের সংকট বলা যেতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকট সমগ্র বিশ্বে এবং দেশে দেশে অর্থনৈতিক অসাম্যকে বৃদ্ধি করেছে। ১৯৮০ সালের তুলনায় বিশ্বের ওপরের ১ শতাংশের আয় দ্বিগুণ হয়েছে। অক্সফামের রিপোর্টে এখন তা ৮২শতাংশ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারও নিম্নমুখী। এসবের ফলে ক্রমাগত গণঅসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গণঅসন্তোষ বৃদ্ধি পেলেও শক্তিশালী বাম শক্তির অনুপস্থিতির কারণে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলিই তাকে কাজে লাগাচ্ছে। মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়, ইউরোপের দেশগুলিতে অতি দক্ষিণপন্থী ও নয়া-ফ্যাসিবাদী শক্তির বৃদ্ধি এই প্রবণতাকে চিহ্নিত করছে। ইউরোপের দেশগুলির পার্লামেন্টের সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ এখন নয়া ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি। অন্যদিকে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব যা স্তিমিত ছিল তাও নতুন করে মাথা চাড়া দিচ্ছে। ফ্রাঙ্কো জার্মান পুঁজির সঙ্গে ব্রিটিশ পুঁজির বিরোধ দেখা দিচ্ছে। ব্রিটেনের ব্রেক্সিটের ঘটনা এই দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে। ট্রাম্পের নীতির সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য পুঁজিবাদী কেন্দ্রগুলির সংঘাতও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে যেখানে বামপন্থীরা সংগ্রামের সামনের সারিতে সেখানে দক্ষিণপন্থী ও নয়া-ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধও দেখা যাচ্ছে।

বামপন্থীদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রিটিশ সংসদীয় নির্বাচনে জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি বাম মঞ্চ গড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে এবং ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বার্নি স্যান্ডার্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইপ্রাসে বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি ঘটেছে। ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাম মোর্চার প্রার্থীর সমর্থনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রিসে সাইরিজা, স্পেনে পোডেমসের মতো শক্তিগুলির সমর্থন বৃদ্ধি বামপন্থার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধিকেই ইঙ্গিত করছে। লাতিন আমেরিকার নিকারাগুয়া থেকে ভেনেজুয়েলা সহ অন্যকিছু দেশে বামপন্থীরা জয়ী হয়েছেন। যদিও সেখানে বামপন্থীরা আগের মতো শক্তিশালী অবস্থানে নেই।

তারপরও মার্কসীয় মতাদর্শের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। কেননা বিপ্লব জরুরি এবং সেটা হতে হবে মার্কসীয়-লেনিনীয় মৌলিকতার উপর ভিত্তি করে আর দেশীয় ইতিহাস, সমাজ এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় করে। পৃথিবীতে আজ সবগুলো সমাজ বিপ্লবের ক্ষেত্রে এই সূত্রায়ন প্রযোজ্য। মার্কসের দ্বিশততম জন্মবার্ষিকীতে সেই কাজটিকেই এগিয়ে নেওয়া হবেই প্রত্যেক মার্কসবাদী-লেনিনবাদীর কর্তব্য।

-অনিন্দ্য আরিফ

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
বেনাপোলে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য

মোঃ রাসেল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি: কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নিয়ে কম কথা হয়নি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বেনাপোলে প্রতিটি স্কুল ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলে চলছে কোচিং বানিজ্য। সকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে আর সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। খেলা ধুলা থেকে ও হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভবক বলেন,শিক্ষার উন্নতির জন্য পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতেই হবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্যও চালু রয়েছে কোচিং ব্যবস্থা। পাস করার আগেই পরীক্ষার্থীরা লাইন দিচ্ছে সেসব কোচিং সেন্টারে ।
দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারের নিকট দাবি জানানো হচ্ছিলো। কিন্তু কাজ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের বাইরে কোচিংয়ে ক্লাস করিয়ে বাড়তি টাকা পান বলে স্কুলগুলোতে ঠিকমতো ক্লাস নেন না। তাই শিক্ষকদের কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করা জরুরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা অত্যাবশ্যক।

সত্যি বলতে কি শিক্ষাঙ্গনে কোচিং ব্যবস্থা এক মারাত্মক ব্যাধির রূপ নিয়েছে। তার বিস্তার ঘটেছে বিপুলভাবে। অধিক উপার্জনের জন্য একশ্রেণির শিক্ষক কোচিংয়ে তার শক্তি ও সময় ব্যয় করছেন। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে শ্রেনীকক্ষের শিক্ষাদান। আবার এর অন্য একটি অনৈতিক দিকও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকারও একধরনের চাপ অনুভব করেন শ্রেনীকক্ষের শিক্ষকের কাছে কোচিং পড়াতে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা অনৈতিক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতামূলক সমাজে সাধারণভাবে পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের আশায় শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছে। শ্রেনীকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান করা গেলে, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একজন শিক্ষার্থীর কোচিংয়ে পড়ার দরকার হতো না। শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি বাস্তবসম্মত অনুপাত রক্ষা করাও জরুরি।

সুতরাং শিক্ষার উন্নতির জন্য পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতেই হবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্যও চালু রয়েছে কোচিং ব্যবস্থা। পাস করার আগেই পরীক্ষার্থীরা লাইন দিচ্ছে সেসব কোচিং সেন্টারে।

শিক্ষাকে কিছুসংখ্যক লোকের অনৈতিক বাণিজ্যের ধারা থেকে বের করে আনতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্ণ প্রস্তুতি ও মনোযোগ দিতে। বিশ্বের কোথাও মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ ধরনের কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির রমরমা ব্যবসা নেই। বর্তমান বাস্তবতায় কোচিং ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দানের পাশাপাশি দক্ষ, মেধাবী ও সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষকতার পেশায় আকৃষ্ট করতে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও সুযোগসুবিধা বুৃদ্ধির বিষয়ে বাস্তববসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সরোজমিনে বেনাপোল সানরাইজ পাবলিক স্কুল, নবদিগন্ত কিন্ডারগর্টেন, বন্দর স্কুল, আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন, বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মডার্ন পাবলিক স্কুল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ছুটির পর ১ ঘন্টা তাদের টিফিন দিয়ে শিক্ষকরা আলাদা কোচিং করছে। যাদের বাড়ি দুরে তাদের বাড়ি থেকে অভিভাবকরা খাবার নিয়ে আসছে। আর যাদের বাড়ি নিকটে তারা গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসছে।

সানরাইজ পাবলিক স্কুলের অভিভাবক জি এম আশরাফ বলেন, শিক্ষার্থীদের এক ঘেয়েমি লেখা পড়ায় স্কুলে দিন কেটে যাচ্ছে। খেলা ধুলার কোন পরিবেশ পাচ্ছে না। সন্ধ্যার সময় বাড়ি যেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু উপায় নাই সব ছেলে মেয়েরা কোচিং করে । বাধ্য হয়ে মেয়েকে কোচিং করাতে হচ্ছে। আর এর জন্য শিক্ষকরা বাড়তি টাকা নিচ্ছে।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
ঐক্য-অনৈক্যে নির্ভর করছে দুই সিটি নির্বাচনে আ.লীগের জয়-পরাজয়

অনলাইন ডেস্ক: গাজীপুর ও খুলনা— এই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সম্ভাব্য জয় ও পরাজয় দুটোই নির্ভর করছে স্থানীয় ঐক্য-অনৈক্যের ওপর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিরোধ-বিভেদ ভুলে স্থানীয় নেতারা এক হলে যেমন জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব, আবার বিরোধ-বিভেদ জিইয়ে থাকলে পরাজয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বলছেন, দুই সিটিতেই জয় যেমন নির্ভর করছে ঐক্যের ওপর, তেমনি পরাজয়ও নির্ভর করছে অনৈক্যের ওপর।

জানা গেছে, আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য এই দুই সিটির নির্বাচনের প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতারা শামিল হওয়ার চেয়ে স্থানীয় নেতাদের ঐক্য নিশ্চিত করতে এবং অনৈক্য দূর করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনিতেই জাতীয় নির্বাচনের বছরে দুই সিটির নির্বাচন ভীষণ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে। এর ওপর স্থানীয় ঐক্য-অনৈক্যের হিসাব-নিকাশ সেই দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ করেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড.আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্থানীয় ছোটখাটো কিছু সমস্যা নির্বাচন এলে সামনে চলে আসে, আওয়ামী লীগ এগুলো মীমাংসা করে চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে অন্তরায়গুলো কী আছে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে, আবার সমাধানও করা হচ্ছে।’
প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়া কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ঐক্যের বিষয়টি এখনও মীমাংসা হয়নি। বাইরে ঐক্যের আওয়াজ থাকলেও ভেতরে অনৈক্য রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই অনৈক্য ভরাডুবির অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে।
দুই সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা দাবী করেন, তারা নির্বাচনি প্রচারণার চেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় অনৈক্যগুলো দূর করে নেতাদের একসঙ্গে প্রচরণায় নামাতে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি সফল হয়েছেন তারা, তা বলা যাবে না। তবে স্থানীয় নেতাদের যাকে যেভাবে আয়ত্তে আনা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সে ক্ষেত্রে সফল হলে নির্বাচনে বিজয়ও নিশ্চিত হবে।
জিতলে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হবে, হারলে নেতাকর্মীদের মনোবলে বড় ধরনের চিড় ধরবে। আবার যেনতেনভাবে জিতে আসলে সরকারের সমালোচনায় মেতে উঠবে বিভিন্ন মহল। এসব বিষয় দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগে।
জানা গেছে, দলের একটি মহল যেনতেনভাবে জিতে আসার পক্ষে অবস্থান নিলেও শীর্ষ পর্যায়সহ বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা এর বিপক্ষে। তাতে করে সরকারের কাঁধে দোষ পড়বে। স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনও দোষ সরকারের কাঁধে নেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করছেন প্রভাবশালী নেতারা। জাতীয় নির্বাচন সামনে, ফলে এই দোষ হীতে বিপরীত হয়ে দেখা দেবে। অপর পক্ষও আগামী নির্বাচনকে উপলক্ষ টেনে দাবি করছে, দুই সিটিতে হেরে গেলে নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরবে, তারা ঘরে ঢুকে যাবে, ঘর থেকে তাদের বের করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। ফলে নির্বাচনে জেতা জরুরি।
নীতি-নির্ধারকেরা বলছেন, সম্ভাব্য জয়-পরাজয় নিয়ে দলের মধ্যে দুই ধরনের আলোচনা চললেও দুই সিটি নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অবস্থান হলো হেরে গিয়ে জেতা যাবে না। আবার জিতেও কোনোভাবেই হেরে যাওয়া যাবে না। অর্থাৎ সরকারের কাঁধে দোষ চাপিয়ে এমন কোনও বিজয় ঘরে নিয়ে আসতে চায় না আওয়ামী লীগ। সমালোচনামুক্ত বিজয়ই হলো দলের একমাত্র কৌশল।
কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, দুই সিটিতে দলের ঐক্যই জয়ের অন্যতম নিয়ামক। ফলে ঐক্য অটুট রাখা গেলে, দ্বিধা-বিভক্তি দূর করা সম্ভব হলে বিজয় দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। আর অনৈক্য থাকলে পরাজয়ের সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যাবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘দুই সিটিতেই আমরা জয়লাভ করবো।’ তিনি বলেন, ‘তবে স্থানীয় নির্বাচনে জয়-পরাজয় জাতীয় নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে না। দুই সিটিতেই এখন আর কোনও বিরোধ-বিভেদ নেই। ফলে জেতার ব্যাপারটি অনেকখানি নিশ্চিত।’

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
শুরু হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্মেলন

মুসলিম বিশ্বের সাড়ে পাঁচ শতাধিক ভিআইপি অতিথিকে নিয়ে ঢাকায় শুরু হল অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এর ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে শনিবার সকাল ১০ টায় সম্মেলন শুরু হয়।

সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে এটাই সবচেয়ে বড় মাপের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্মেলন। ওআইসি’র এ সম্মেলন চলবে দুই দিন। গত বছর আইপিও সম্মেলন আয়োজন হলেও এবারের অতিথি ও বিষয়বস্তু দু’টোই আগের চেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
চীনেও ‘বাহুবলী’ একদিনেই ভেঙে ফেলল সমস্ত রেকর্ড!

দক্ষিণী সিনেমা বাহুবলী-২ এর কথা নিশ্চয় মনে আছে সবার। প্রভাস-আনুশকা অভিনীত বাহুবলী-২ সিনেমাটি মুক্তির পর জনপ্রিয়তার একেবারে শিখর পর্যন্ত ছুঁয়েছিল। ছবিটি শুধু ভারতেই নয় বিদেশেও রাজামৌলির ‘বাহুবলী-২: দ্য কনক্লুশন’ বক্স অফিসে কী হারে ব্যবসা করেছিল সে কথা তো প্রায় সকলেরই জানা।

এবার চীনেও মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। শুক্রবার (৪ মে) ‘বাহুবলী ২: দ্য কনক্লুশন’ মুক্তি পেয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম এদেশটিতে। আর চীনে মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত রেকর্ড ভাঙতে শুরু করেছে প্রভাস-আনুশকার ‘বাহুবলী-২: দ্য কনক্লুশন’।

বাহুবলী-২ চীনে মুক্তির প্রথম দিনেই কত টাকা ব্যবসা করেছে জানেন?

সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রথম দিনেই ১.১৮ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করেছে ব্যবসা করেছে। যা কিনা লাইফটাইম রেকর্ড বলে জানাচ্ছেন ফিল্ম সমালোচকরা। আর মাত্র সকাল ও দুপুরের শো-গুলোর মধ্যেই বাহুবলী-২ এই ব্যবসা করে ফেলেছে বলে জানা গেছে। বিকেলের শোগুলোতে যে বাহুবলীর বক্স অফিস কালেকশন আরো বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। বাহুবলীর এই সাফল্যের কথা টুইট করে জানান, ফিল্ম সমালোচক রমেশ বালা।

উল্লেখ্য, চীনের সর্বমোট ৭ হাজার প্রেক্ষাগৃহে বাহুবলী-২ মুক্তি পেয়েছে। একইভাবে আমির খানের ‘দঙ্গল’ সিনেমাটিও চীনের ৭ হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। চীনে ‘দঙ্গল’ সিনেমার বক্স অফিস কালেকশন ছিল প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকা। রাজামৌলি বাহুবলী-২ সেই রেকর্ডকেও ভেঙে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীনে আমির খানের ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ অবশ্য ৬ হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest