সর্বশেষ সংবাদ-
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরায় এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণভোমরার ইউপি চেয়ারম্যানকে ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দিলেন ইউনিয়নবাসীআশাশুনিতে শহীদের স্মরণে দুঃস্থদের মাঝে জামায়াতের খাবার বিতরণদেবহাটায় বিয়ের প্রলোভনে কলেজ শিক্ষার্থীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে থানায় মামলাস্বৈরাচার ঠেকিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার এনসিপিরসাতক্ষীরায় দ্রুতগামী পিকআপের চাপায় ভ্যান চালকের মৃত্যুকোন সাংবাদিক যেন হয়রানির শিকার না হয়–সাতক্ষীরায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব দীর্ঘদিন কাজ করেও সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি বিআরটিএ’র সীল মেকানিকদেররাষ্ট্রপতির ক্ষমার আগে ভুক্তভোগী ও পরিবারের মতামত নেওয়ার প্রস্তাবতালায় ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস’ অনুষ্ঠিত

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শাকিব খান

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। চিকিৎসার জন্য বর্তমানে তিনি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায়  খবরটি জানিয়েছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুর ইসলাম লেনিন। তিনি বলেন, শাকিব খান আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টার দিকে ল্যাবএইডে ভর্তি হন।

লেনিন আরো বলেন, বর্তমানে শাকিব খান কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ ওয়াদুদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। চেস্ট ডিসকফোর্টের কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল আসেন তিনি। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হন শাকিব।

প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর শাকিব খানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুই থেকে তিনদিন শাকিব খানকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। তবে ল্যাবএইড থেকে কখন ছাড়া পাবেন এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
নারকেল তেলের কিছু অজানা ব্যবহার

নারকেল তেলকে বলা হয় ‘মিরাকেল অয়েল’। কারণ চুল কিংবা ত্বক পরিচর্চার পাশাপাশি অনেকগুলো স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান করে থাকে এই নারকেল তেল। এর কিছু ব্যবহার আছে যা আমাদের কাছে এখনও অজানা। তবে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই সেগুলো সম্পর্কে।

১। ছোটখাটো জ্বালাপোড়া
হঠাৎ করে হাত পুড়ে গেলে সেখানে কিছু পরিমাণ নারকেল তেল ব্যবহার করুন। দেখবেন জ্বালাপোড়া অনেকটা কমে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর পুড়ে যাওয়া স্থানে নারকেল তেল ব্যবহার করুন।

২। ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে
ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে নারকেল ব্যবহার করা হয়। লোশন ব্যবহার না করে ত্বকে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং রিংকেল দূর করে দেয়।

৩। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে বগলে কিছু পরিমাণ নারকেল তেল ম্যাসাজ করে লাগান। নারকেল তেলে থাকা উপাদান ঘাম শুষে নেয়, যা দুর্গন্ধ হওয়া রোধ করে।

৪। ব্যথা প্রশমিত করতে
জয়েন্টের ব্যথা কিংবা হাঁটু ব্যথাতে কুসুম গরম নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন। এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।

৫। অনিদ্রা দূর করতে
ঘুমের সমস্যা দূর করে দেবে নারকেল তেল। প্রতিদিন তিন টেবিল চামচ বিশুদ্ধ নারকেল পান করুন। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া ঠিক রাখে। যা আপনাকে ভালো ঘুমে সহায়তা করে।

৬। বলিরেখা দূর করতে
বলিরেখা এবং রিংকেল প্রতিরোধ করতে নারকেলের জুড়ি নেই। দিনে দুইবার ত্বকে নারকেল তেল ম্যাসাজ করে লাগান। এটি নিয়মিত করুন। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করে।

৭। এ্যার্নাজি বৃদ্ধিতে
খাবার উপযুক্ত নারকেল তেল প্রতিদিন খেলে তা দেহের এনার্জি বৃদ্ধি করে। এছাড়া নারকেল তেলের থাকা অ্যাসিড মস্তিষ্ক রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। তবে রান্নায় বিশুদ্ধ নারকেল তেল ব্যবহার করা উচিত।

৮। হজমের সমস্যা দূর করতে
নারকেল তেলে কিছু উপকারি ফ্যাট রয়েছে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান পাকস্থলীর ইনফেকশন দূর করে। ফলে হজমের সমস্যা দূর হয়।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
সেরা অভিনেত্রী তিশা ও কুসুম শিকদার, কণ্ঠশিল্পী শাওন

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬-এর জন্য চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সভাপতিত্বে বৈঠক শেষে ২০১৬ সালে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিভাগে সেরাদে চূড়ান্ত নামের তালিকা ঘোষিত হয়।

এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬-এর জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও কুসুম শিকদার। সেরা কণ্ঠশিল্পী(নারী) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন নির্মাতা, গায়িকা ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘অস্তিত্ব’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিশা ও ‘শঙ্খচিল’-এর জন্য কুসুম শিকদারকে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। আর সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘কৃষ্ণপক্ষ’র জন্য নির্বাচিত হয়েছেন শাওন।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
ভারতীয় মন্ত্রীর বোনকে নিয়ে পালাল বাংলাদেশি যুবক !

ভারতের উত্তর প্রদেশের মন্ত্রীর এস পি সিং বাঘেলের বোনকে নিয়ে এক বাংলাদেশি যুবক উধাও হয়েছেন। মন্ত্রীর পরিবার ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে নিয়ে পালিয়েছেন তিনি’।

সম্পদ অধিকারী নামের ওই যুবক বাংলাদেশের নড়াইল জেলার বাসিন্দা। সেখান থেকে ভারতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী মন্ত্রীর বোনকে নিয়ে পালানোর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত ওই যুবককে খুঁজছে পুলিশ।

ভারতীয় দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সম্পদ অধিকারী নামের ওই যুবক প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই কিশোরীকে নিয়ে ১২ দিন আগে পালিয়েছে। ওই যুবক উত্তরপ্রদেশ থেকে মন্ত্রীর বোনকে নিয়ে পালিয়ে আসে উত্তর২৪পরগনায়। প্রথমে বারাসতে এসে ঠাঁই নিলেও পরে আর তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এদিকে বোনকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন মন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা। রাজ্যজুড়ে দুইজনের ছবি টানানো হয়েছে। কিশোরীর খোঁজে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তেও নজরদারি চলছে।

তবে সম্পদ অধিকারীর আত্মীয়স্বজনরা বলছেন, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে উত্তপ্রদেশে পাড়ি জমায় সম্পদ। সেখানে গিয়ে বারাসতের কানাপুকুর এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে। তারপর সেই বাড়ি ভাড়ায় দিয়ে উত্তরপ্রদেশে বোনের কাছে চলে যান তিনি।

নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভগ্নিপতির ওষুধের দোকানে বসতেন সম্পদ অধিকারী। এলাকায় হাতুড়ে ডাক্তার হিসেবে নামডাকও হয়। সেখান থেকেই মন্ত্রীর বোনের সঙ্গে পরিচয় তার।

মন্ত্রীর ভাই নীরজ সিং বলেন, সম্পদের সম্পর্কে সব তথ্য জোগাড় করেছেন তারা। বাংলাদেশে সম্পদের বাবা-মা থাকেন। সেখানে ইতি অধিকারী নামে এক স্ত্রীও রয়েছে সম্পদের। তা সত্ত্বেও মন্ত্রীর ১৬ বছরের বোনকে নিয়ে পালিয়েছেন। নিজেকে খুব বড়লোক বলে পরিচয় দিয়েছিলেন সম্পদ।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
ভালোবাসা এবং ভালোবাসা মুহম্মদ জাফর ইকবাল

মার্চ মাসের ৩ তারিখ শনিবার বিকালে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের তৈরি করে আনা রোবটদের যুদ্ধ দেখছি, হঠাৎ করে মনে হলো আমার মাথায় বুঝি ‘আকাশ ভেঙে’ পড়েছে। বড় কোনো দুঃসংবাদ পেলে আমরা বলি মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে, তবে এটি পুরোপুরি আক্ষরিক। মনে হচ্ছে মাথার ওপর সত্যি কিছু ভেঙে পড়েছে একবার, দুবার, বারবার। কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। মানুষের চিৎকার হৈচৈ তার মাঝে আমি উঠে দাঁড়ালাম। বুঝতে পারলাম যেটাই ঘটে থাকুক সেটা শুধু আমাকে নিয়ে। মঞ্চ থেকে আমি নিচে তাকিয়েছি, ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছে। একজন ছাত্রীর চোখে অবর্ণনীয় আতঙ্ক, সে দুই হাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করছে।

আমি তাদের শান্ত করার চেষ্টা করলাম। হাত নেড়ে বললাম, ‘আমার কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি’— কিন্তু আমার কথায় কোনো কাজ হলো না। নিচে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েরা চিৎকার করতেই থাকল। আমি মাথায় হাত দিলাম এবং রক্তের উষ্ণ ধারা অনুভব করলাম। হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম ভয়ানক কিছু একটা ঘটে গেছে, কেউ একজন আমাকে মেরে ফেলার জন্য আক্রমণ করেছে।

সেই মুহূর্তের অনুভূতিটি আমি কখনো ভুলব না। অনুভূতিটি ভয়ের নয়, অনুভূতিটি যন্ত্রণার নয়, অনুভূতিটি হতাশা কিংবা ক্রোধেরও নয়, অনুভূতিটি ছিল লজ্জার অনুভূতি। আমি বিস্ময়কর এক ধরনের লজ্জায় কুঁকড়ে উঠেছিলাম। আমার মনে হলো এ পৃথিবীতে এমন মানুষ আছে যে আমাকে এত ঘৃণা করে সে আমাকে প্রকাশ্য দিবালোকে মেরে ফেলতে চায়? আমি কী করেছি?

চারপাশে কী হচ্ছে আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। মঞ্চের এক পাশে একজনকে অনেকে মিলে মারছে, কাছে একটা চাকু পড়ে আছে। আমি দুর্বলভাবে তাকে না মারতে বললাম। আমার কথা কেউ শুনতে পেল কিনা জানি না। আমার ছাত্র আর সহকর্মীরা ততক্ষণে আমাকে জাপটে ধরে টেনে সরিয়ে নিতে থাকে। পুলিশের অনুসরণ করতে থাকে এবং এতদিন যেটাকে আমি পুলিশ বাহিনীর একটা অর্থহীন কাজ বলে ভেবে এসেছি হঠাৎ করে সেটি আমার জীবন বাঁচানোর কাজে লেগে গেল। একটা ছেলে তার শার্ট খুলে আমার মাথায় চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করতে থাকে। অন্যরা আমাকে রীতিমতো পাঁজাকোলা করে মাইক্রোবাসে তুলে নিল এবং মুহূর্তের মধ্যে মাইক্রোবাসটি আমাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে যেতে থাকে।

প্রথম আমার যে কথাটি মনে হলো সেটি হচ্ছে— আমি এখনো জ্ঞান হারাইনি, কাজেই আমাকে আমার স্ত্রী এবং কন্যার সঙ্গে নিজে কথা বলতে হবে যেন তাদের খবরটি অন্য কারও কাছ থেকে পেতে না হয়। সাধারণত আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনে সবসময় একসঙ্গে থাকি কিন্তু আজকে এ মুহূর্তে সে ঢাকায়। প্রথমে আমার মেয়ের সঙ্গে, তারপর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যতটুকু সম্ভব শান্তভাবে তাদের খবরটি দিলাম। বললাম, এখনো জ্ঞান আছে এবং এখনো চিন্তা করতে পারছি তবে যেহেতু অনেক রক্ত পড়ছে তাই পরে কী হবে জানি না। আমি আমার ছেলে, ভাইবোন সবাইকে খবরটা দিতে বললাম। এ ধরনের খবর টেলিভিশন থেকে পেতে হয় না। মনে হলো ভাগ্যিস আমার মা বেঁচে নেই, না হলে তাকেও এ খবরটি দিতে হতো!

মাইক্রোবাস মোটামুটি ঝড়ের বেগে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে এবং তখন আমি একটু বোঝার চেষ্টা করলাম আমার আঘাত কতটুকু গুরুতর। পুরো শরীর রক্তে ভিজে যাচ্ছে, আমি ভেবেছিলাম আমার আঘাত মাথায়, তাই একটা শার্ট দলামোচা করে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু পিঠেও একটা অনেক বড় আঘাত আছে আমি যেটার কথা তখনো জানি না। আমার একমাত্র সম্বল আমার মস্তিষ্কটি, মাথার আঘাতে সেটার কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা কে জানে? আমি ভাবলাম পরীক্ষা করে দেখি মস্তিষ্কটি ব্যবহার করতে পারি কিনা। তাই ফিবোনাচি সিরিজটি বের করার চেষ্টা করলাম। গোটা দশেক পদ বের করে আমি বুঝতে পারলাম এখনো হিসাব করতে পারছি। তখন আমি আমার ১ যোগ ১ সমান ২, ২ যোগ ১ সমান ৩, ২ যোগ ৩ সমান ৫…’

জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতাটি আমার খুব প্রিয় কবিতা। মনে মনে তার প্রথম কয়েকটা লাইন আওড়ে গেলাম— ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে…’ যখন দেখলাম বনলতা সেন কবিতাটি মনে আছে তখন নিজেকে নিজে বোঝালাম মস্তিষ্কের সম্ভবত গুরুতর ক্ষতি হয়নি।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানে বিশাল হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। এত দ্রুত কীভাবে খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং এত দ্রুত কীভাবে হাসপাতাল লোকারণ্য হয়ে যায় সেটি আমার জন্য একটি রহস্য! আমাকে প্রথমে হুইল চেয়ারে, তারপর একটি ট্রলিতে শুইয়ে হাসপাতালের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে নিয়ে যাওয়া হতে থাকল। একটি ট্রলি দুজনই ঠেলে নিতে পারে কিন্তু আমি দেখলাম কয়েক ডজন ছাত্র-শিক্ষক এবং অপরিচিত মানুষেরা আমার ট্রলিটি ঠেলে হাসপাতালের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তার মাঝে বিপজ্জনক জায়গায় দাঁড়িয়ে টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানরা ছবি নেওয়ার চেষ্টা করছে। দেখলাম কম বয়সী একজন একটা ক্যামেরা নিয়ে ভিড়ের মধ্যে অনেক ঠেলাঠেলি করে একটা মোক্ষম ছবি তোলার চেষ্টা করছে! আমার কী মনে হলো কে জানে, সকৌতুকে ছেলেটিকে ডেকে বললাম, ‘এসো, একটা সেলফি তুলে ফেলি!’ ছেলেটি লজ্জা পেয়ে সরে গেল, এখন মনে হচ্ছে ছেলেটাকে এভাবে লজ্জার মাঝে ফেলে দেওয়া ঠিক হয়নি কিন্তু তখন আমি যথেষ্ট সন্তুষ্টি অনুভব করেছিলাম। মনে হয়েছিল যেহেতু এরকম অবস্থাতেও আমার সেন্স অব হিউমার অক্ষত আছে তার মানে আমার মস্তিষ্কটিও নিশ্চয়ই অক্ষত আছে! হাসপাতালের নানা জায়গা ঘুরে আমাকে অপারেশন থিয়েটারে আনা হলো। ততক্ষণে ডাক্তার এবং নার্সরাও চলে এসেছেন।

শুধু ডাক্তার এবং নার্স নয়, তার সঙ্গে অসংখ্য মানুষ, ক্যামেরাসহ সাংবাদিক, ছাত্র, শিক্ষক, সহকর্মী, পুলিশ এবং অসংখ্য কৌতূহলী দর্শক! আমার অনেক সহকর্মী এবং পরিচিত মানুষ ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি করছেন এবং আমি তাদের নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছি! আমি ডাক্তার নই কিন্তু কমনসেন্স থেকে বুঝতে পারছি আমার রক্তপাত বন্ধ করতে হবে এবং রক্ত দিতে হবে। অপারেশন থিয়েটারের এ বাজারের ভিতর সেটা কেমন করে করা হবে আমি জানি না। এর মাঝে আমার রক্তের গ্রুপের কথা বলা হয়েছে (শুনে অনেকে বিশ্বাস নাও করতে পারেন, আমি আমার রক্তের গ্রুপ জানি, এ পজিটিভ!) আমি যদিও এ পজিটিভ বলেছি, অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে মনে হলো উৎসাহী কেউ কেউ সেটাকে ও পজিটিভ শুনতে পেয়েছে! যে ডাক্তার আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাকে বললাম, ‘রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা না করে আমাকে রক্ত দেবেন না, প্লিজ! ‘ডাক্তার আমাকে অভয় দিলেন, বললেন, রক্তের গ্রুপ না মিলিয়ে কখনো রক্ত দেওয়া হয় না।

অপারেশন থিয়েটারবোঝাই মানুষজনের মাঝেই ডাক্তাররা কাজ শুরু করে দিলেন। আমাকে জানালেন, আমার আঘাতটা যাচাই করে চিকিৎসা শুরু করার আগে আমাকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দিতে হবে। ঠিক কী কারণ জানা নেই আমার, মনে হচ্ছিল আমাকে অজ্ঞান করা হলে আমি বুঝি আর জ্ঞান ফিরে পাব না। মাঝে মাঝেই আমার মনে হচ্ছিল আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলব কিন্তু আমি দাঁতে দাঁত চেপে জ্ঞান ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আমি অবুঝের মতো ডাক্তারদের সঙ্গে তর্ক করতে শুরু করেছি, তাদের বলতে শুরু করেছি আমাকে অজ্ঞান না করে চিকিৎসা শুরু করেন। ডাক্তাররা বললেন, তাহলে আপনার এত যন্ত্রণা হবে যে সেই যন্ত্রণাতেই আপনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন। আমি তাতেই রাজি-কিন্তু ডাক্তাররা আমার মতো অবুঝ মানুষের ছেলেমানুষী আচার মেনে নিশ্চয়ই চিকিৎসা করতে আসেননি। তাই আমি নিজেও জানি না কখন আমি জ্ঞান হারিয়েছি।

এরপর আবছা আবছাভাবে যখন আমার জ্ঞান হলো তখন মনে হলো আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যতক্ষণ জ্ঞান ছিল ততক্ষণ নিশ্চয়ই আমার শরীরে এড্রেনেলিনের বন্যা বইছিল, তাই সবকিছুতেই সজাগ হয়েছিলাম। এখন আমি পুরোপুরি নির্জীব। কোনো কিছুতেই আর কিছু আসে যায় না। এক সময় চোখ খুলে তাকাতেই মনে হলো আমাদের শিক্ষামন্ত্রী আমার ওপর ঝুঁকে পড়ে কিছু একটা বলছেন। আমি শোনার চেষ্টা করলাম, মনে হলো তিনি বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য আমাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি যেন কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা না করি।

তখন আমার চিন্তা করার বিশেষ ক্ষমতা নেই। চেতনা এবং অচেতনার মাঝে ঝুলে আছি। হেলিকপ্টারে আমার এক-দুজন সহকর্মীকে দেখতে পেলাম। এক সময় হেলিকপ্টার উড়তে শুরু করল। কতক্ষণ উড়েছে জানি না, মনে হলো বুঝি অনন্তকাল পার হয়ে গেছে। এক সময় হেলিকপ্টার থেমেছে, আমাকে স্ট্রেচারে করে নামানো হলো, সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত, তাই কেউ উপরে আকাশের দিকে তাকায়নি। শুধু আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি— নির্মেঘ বিশাল একটি আকাশ, তার মাঝে ভরা একটি চাঁদ স্নেহভরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি শিহরণ অনুভব করলাম, পৃথিবী এত সুন্দর? এ সুন্দর পৃথিবীতে আমি আরও কিছু দিন বেঁচে থাকতে পারব।

আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়া হলো। সেখানে আমার সব আপনজনেরা অপেক্ষা করছে। কেউ কাছে আসছে না, সবাই দূর থেকে দেখছে। ডাক্তাররা আমাকে পরীক্ষা করলেন, আমার স্ত্রী এসে একটু কথা বলল, তারপর আবার আমাকে সরিয়ে নেওয়া হলো। কিছুক্ষণের মাঝে সিসিইউয়ের অসংখ্য জটিল যন্ত্রপাতির মাঝে আমি আটকা পড়ে গেলাম। আবছা আবছাভাবে মনে পড়ে কোনো এক সময় ডাক্তারদের কাছে চিঁ চিঁ করে জানতে চাইলাম, আমার অবস্থা কেমন? তারা বললেন, ভালো। আমি জানতে চাইলাম সবাইকে কি এটা জানানো হয়েছে? তারা বলেছেন, হ্যাঁ, জানানো হয়েছে, আমার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমি এখনো জানি না কারণটা কী, কিন্তু আমি অনুভব করতে পারি এ দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ের আমার জন্য এক ধরনের ভালোবাসা আছে, ‘ধুম’ করে মরে গিয়ে তাদের মনে কষ্ট দেওয়ার আমার কোনো অধিকার নেই।

বাইরে কী হচ্ছে আমি কিছু জানি না। ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর শুনতে পারলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেখতে আসবেন। অবিশ্বাস্য ব্যাপার— আমি কে? আমাকে দেখার জন্য এ দেশের প্রধানমন্ত্রী চলে আসবেন?

সত্যি সত্যি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেখতে এলেন। ডাক্তাররা আমার সম্পর্কে রিপোর্ট দিলেন। সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ডাক্তাররা অবিশ্বাস্য চাপের মাঝে থেকেও কী অসাধারণভাবে আমাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছেন সেটা বললেন। প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে কথা বললেন, খোঁজখবর নিলেন। চলে যাওয়ার সময় আমি কুণ্ঠিত স্বরে বললাম, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে, ১৬ কোটি মানুষের দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী আমার মতো একজনকে দেখতে চলে এসেছেন।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার দিকে তাকিয়ে আপনজনের মতো হেসে বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোনো বড় কিছু না, আজ আছি কাল নেই। কিন্তু এটা সত্যি যে, আমি হচ্ছি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে! এটা আমার অনেক বড় অহংকার, কেউ এটা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।’

আমার মনে হলো এরচেয়ে বড় সত্যি কথা আর কী হতে পারে? সঙ্গে সঙ্গে আমার এটাও মনে হলো যে, আমার কত বড় সৌভাগ্য যার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত তিনি আমাকে দেখতে চলে এসেছেন। কী অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।

যাই হোক, আমি আমার জীবনে এভাবে এর আগে কখনো হাসপাতালে থাকিনি। হাসপাতালে থাকার অভিজ্ঞতাটুকু খুবই বিস্ময়কর। কাউকে যদি বলতে হয় আমাকে শুধু একটি কথা দিয়ে বোঝাতে হবে— সেটি হচ্ছে ভালোবাসা। যে মেয়েটি আমার ঘরের মেঝেটি মুছে দিয়েছে সেখান থেকে শুরু করে যার নেতৃত্বে এ বিশাল প্রতিষ্ঠানটি চলছে সবাই আমার জন্য যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন আমি কোনো দিন তার প্রতিদান দিতে পারব না। কথা প্রসঙ্গে আমি তাদের বলেছি যদি কোনোভাবে আমার এ হাসপাতালের অভিজ্ঞতাটুকু আগে হতো তাহলে আমি নিশ্চিতভাবে আমার অগ্রজ হুমায়ূন আহমেদকে তার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে না গিয়ে এখানে চিকিৎসা করার জন্য বলতাম। আমার জন্যই সবার বুকের ভিতর এত ভালোবাসা, হুমায়ূন আহমেদকে তারা সবাই না জানি কত গভীর মমতা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করতেন।

আমার এ ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর শুনেছি সারা দেশে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে, দেশের অনেক মানুষ নানাভাবে আমার জন্য তাদের ভালোবাসাটুকু প্রকাশ করেছেন। আমি সে দিনগুলোর খবরের কাগজ দেখিনি, টেলিভিশনের খবর শুনিনি তারপরও আমি সবার ভালোবাসাটুকু অনুভব করতে পারি। সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের অস্থিরতার খবর জানতাম বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় না এসে সরাসরি এয়ারপোর্ট গিয়েছি, একটা প্লেন ধরে সিলেট গিয়েছি। যে মুক্তমঞ্চে বিভ্রান্ত ছেলেটি আমাকে আক্রমণ করেছিল সেই একই মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় আমার ঘুরেফিরে অভিজিৎ, অনন্ত, নিলয়, ওয়াসিক দীপন এরকম সবার কথা মনে পড়ছিল যারা কেউ বেঁচে নেই। আমি কীভাবে বেঁচে গেছি কেন বেঁচে গেছি এখনো জানি না। যখন এ লেখাটি লিখছি তখন আমার প্রিয় ছাত্র মাহিদ আল সালামের কথা মনে পড়ছে। শাহবাগে আমার ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ সভায় সে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছে অথচ দুর্বৃত্তের আক্রমণে দুই দিন আগে একেবারে হঠাৎ করে তাকে জীবন দিতে হলো। কে জানে পৃথিবীটা কেমন করে এত নিষ্ঠুর হয়ে যেতে পারে।

দেশের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আমি এ লেখাটা লিখছি। অসংখ্য মানুষ আমাকে ভালোবাসা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন, তাদের সবার জন্য ভালোবাসা। যারা আমাকে লিখেছে আলাদা করে আমি তাদের সবার কথা উল্লেখ করতে পারব না, শুধু ছোট একটা মেয়ের কথা লিখি। যে আমাকে সাহস দিয়ে লিখেছে— একটু বড় হয়েই সে কারাটে ক্লাসে ভর্তি হয়ে যাবে। তারপর ব্ল্যাক বেল্ট হয়ে আমার বডিগার্ড হয়ে বাকি জীবন আমাকে পাহারা দিয়ে বেড়াবে যেন আর কেউ কখনো আমার ওপর আক্রমণ করতে না পারে।

আমার ওপর এ আক্রমণটি না হলে আমি কি কখনো জানতে পারতাম কতজনের বুকের ভিতর আমার জন্য কত ভালোবাসা জমা হয়ে আছে?

লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
এতিমের টাকা যিনি মেরে খান তার জন্য কিসের আন্দোলন : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে টাকা আনা হয়। এর একটি টাকাও এতিমদের দেয়া হয়নি। নিজেরা মেরে খেয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই অর্থ আত্মসাতের মামলা দেয়। মামলায় আদালত সাজা দিয়েছে। এখন আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। যে এতিমের টাকা চুরি করে তার জন্য কিসের আন্দোলন?
বিএনপি নেত্রীকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তারা তো দুর্নীতি ও লুটপাটেই ব্যস্ত। ৯৮০ কোটি টাকা তার ছেলেরা ব্যাংক থেকে লুট করে নিয়ে গেছে। এর এক টাকাও ফেরত দেয়নি।
বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে ঠাকুরগাঁও জেলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জনসভার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন। পরে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে নৌকায় ভোট দেয়ার দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নৌকায় ভোট দিন, আমরা সোনার বাংলা উপহার দেবো। এ সময় তিনি বলেন, আপনারা ওয়াদা করেন, হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। তখন উপস্থিত লাখো জনতা হাত তুলে স্লোগান দিয়ে নৌকায় দেয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক ঘরে পৌঁছে দেয়া। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমরা যেহেতু ২০০৮-এর সরকারের এসেছি, ২০১৪তে পুনরায় সরকারে এসেছি- সরকারের ধারবাহিকতা রয়েছে বলেই আজকে উন্নয়নের ছোঁয়া প্রতিটি এলাকায়- গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নৌকা মার্কায় আমি আপনাদের কাছে ভোট চাই। কারণ, নৌকা মার্কাই দেবে উন্নতি, নৌকা মার্কাই দেবে আপনাদের শান্তি, নৌকা মার্কাই করবে আপনাদের জীবনমান উন্নত।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা জনগণের সেবক। জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণকে দিতে এসেছি। দেশকে উন্নয়ন করা, দেশের ভাগ্য উন্নয়ন করা এটাই আমাদের কাজ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা মানুষ শান্তিতে খেয়ে-পড়ে বসবাস করবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় থাকতে পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কেন হয়েছিল? তারা তো পুরো দেশটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছিল। খালেদা জিয়া ও তার ছেলেরা অর্থসম্পদ লুটপাট করে পাচার করেন। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সেই তথ্য বের করেছে, সিঙ্গাপুরে সেটা ধরা পড়েছে। আমরা সেই টাকা ফেরত পর্যন্ত এনেছি। সেই টাকা এখন জনগণের কাজে লাগাচ্ছি।
তিনি বলেন, তারা ধ্বংস করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে না। এরা মানুষেরটা লুটপাট করে খেতে জানে, মানুষকে দিতে জানে না।
প্রধানমন্ত্রী তার ৩৮ মিনিটের বক্তৃতায় আরো বলেন, ‘বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারা দিন কথা বলেন। দিন-রাত মিথ্যা কথা বলতে বলতে তার গলা ব্যথা হয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা বলারও একটা সীমা আছে। এত মিথ্যা বললে আল্লাহও নারাজ হয়।’
তিনি বলেন, ‘তিনি (মির্জা ফখরুল) তো এক সময় বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু বিমানের কী উন্নয়ন করেছিলেন? আমরা ক্ষমতায় এসে দেখলাম বিমান চলে না। সব টাকা পয়সা লুটপাট করে নেয়া হয়েছে, বিমানকে ধ্বংস করে রেখে গেছে। বিমানের প্লেন ঝরঝরে। রাডার নষ্ট। এখান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে সৈয়দপুর বিমানবন্দর। সেই বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখানকার বিমান প্রতিমন্ত্রী, অথচ এখানকার এয়ারপোর্টই বন্ধ করে দেন। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে এই বিমানবন্দর চালু করে দিয়েছি। এখান থেকে এখন সব মানুষ আকাশ পথে যাতায়াত করতে পারছে। তারা রাজশাহী, বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা তাও চালু করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক, উন্নত হোক। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে চলুক সেটাই আমরা চাই। ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, স্পেশাল ইকনোমিক জোন স্থাপন, আন্ত:নগর ট্রেন চালু, আইটি পার্ক, ভূল্লী থানা, কর্মজীবী মহিলাদের হোস্টেলসহ সকল উপজেলায় একটি করে স্কুল-কলেজ সরকারি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য যা যা উন্নয়ন দরকার তা আমরা করেছি। তারপরেও যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল কলেজ নেই সেখানে আমরা প্রতিষ্ঠান করে দেব। ঠাকুরগাঁও জেলায় যেনও একটা বিশ্ববিদ্যালয় হয় সে ব্যবস্থা আমরা করব।
তিনি বলেন, এই জেলায় কর্মস্থানের জন্যে, আমি জানি এই জেলা খাদ্য উদ্বৃত্তের এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অঞ্চল যেন গড়ে উঠে তার ব্যবস্থা আমরা করব। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করব। গুল্লি থানা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ, রানী শৈঙ্কল, হরিপুর পাকা রাস্তা যাতে প্রশস্ত হয় তার ব্যবস্থা করে দেব। ঠাকুরগাঁও যাতে আইটি পার্ক হয় তার ব্যবস্থা করে দেব। কর্মচারী মহিলাদের জন্যে হোস্টেল করে দেব যাতে তারা থাকতে পারে। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার যত ড্রেন, রাস্তা সেগুলোর উন্নত করার ব্যবস্থা করব। ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ যাতে বিশুদ্ধ পানি পায় তার জন্যে ওভার হেড ওয়াটার ট্যান্ক করে দেব। প্রত্যেক উপজেলায় একটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার করে দেব। ইসলাম ধর্মের নামে কেউ যাতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করুক তা আমরা চাই না।
0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
ধুলিহরের ৪ গ্রামে বিদ্যুতায়ন

মাহফিজুল ইসলাম আককাজ: সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, দৌলতপুর, পূর্ব শুকদেবপুর ও আহসানডাঙ্গা গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাম শুভ বিদ্যুতায়নের উদে¦াধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ০৮নং ধুলিহর ইউনিয়নের ০৬ ওয়ার্ডের দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারে ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান (বাবু সানা)’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে স্লুইচ টিপে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা-০২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ দাস, জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন উর রশিদ, জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মকসুমুল হাকিম, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম কম মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ধুলিহর ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, দৌলতপুর, পূর্ব শুকদেবপুর ও আহসানডাঙ্গা গ্রামে ৭. ৫৩০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে ৯৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩শ৩০টি পরিবারের মাঝে এ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest
ঝাউডাঙ্গায় গাঁজাসহ ১৪ট মামলার আসামি মাদক সম্রাট মুকুল আটক

মাষ্টার মফিজুর রহমান : সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর দেবনগরে পুলিশের অভিযানে ২শত গ্রাম গাঁজা সহ এক মাদক সম্রাটকে আটক করেছে পুলিশ।

আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর দেবনগর গ্রামের মৃত আনছার আলী সরদারের ছেলে জামাত কর্মী মুকুল হোসেন (৫২)।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ঝাউডাঙ্গা বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে সহকারী উপ-পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দেবনগর থেকে বুধবার রাতে ২শত গ্রাম গাঁজা সহ মুকুলকে আটক করে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুর রহমান জানান, মুকুল ১৪টি নাশকতা ও মাদক মামলার অাসামি। সে একজন চিহ্নিত গাঁজা ও ফেনসিডিল ব্যবসায়ী এবং নাশকতা মামলার পলাতক আসামী। তাকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, মাদক দ্রব্য নির্মূলে তিনি বদ্ধপরিকর। মাদকের সাথে কখনোই আপস নয়। মাদক ও আসামী আটকের পর যারা তাদেরকে ছাড়াতে জোর তদ্বির করছেন, তাদেরকেও ছাড়া হবে না। কিছু চিহ্নিত দালালের কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালনে পিঁছপা হবেন না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

0 মন্তব্য
0 FacebookTwitterGoogle +Pinterest