শ্যামনগর ব্যুরো: সবুজের জন্য নানারকম কর্মসূচি চলছে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ খ্যাত গাবুরা ইউনিয়ন। ভয়ংকর আইলার ছোবলে সবুজ নামক দৃশ্যটি হারিয়ে ফেলেছিল গাবুরার মানুষ। চারিদিকে ছিলো ধু-ধু মরুভূমি।এ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিবছর দেশের প্রতিটি উপজেলার বৃক্ষ মেলার আয়োজন হলেও গাবুরা ইউনিয়নে বৃক্ষমেলা থেকে বৃক্ষ ক্রয় করে মানুষ গাছ লাগাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। মানুষ গাছের প্রতি এখন অনেক আন্তরিক। সাধুবাদ জানাই এখানকার স্থানীয় মানুষকে। বিশ্বের আবহাওয়াবিদদের মতে, গত আইলার করাল ছোবল থেকে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট অনেকটা রক্ষা করেছে। ফলে দেশের উপকূলীয় এলাকার ক্ষতি কিছুটা কম হলেও মানুষ সহ জীব বৈচিত্র্য হারা হয়েছিলো গাবুরা। যদি এই অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট না থাকত তাহলে আইলা ও সিডরে যে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে আরো ২০ গুণ বেশি ক্ষতি হতো। গাছ আমাদের বিপদের বন্ধু, গাছ বিহীন স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন। জীবনে-মরণে গাছের প্রয়োজন। ফুল, ফল, কাঠ, জ্বালানি, ছায়া আমরা গাছ হতে পেয়ে থাকি। গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা করে। ভারসাম্য বজায় রাখে। আবহমান বাংলার চিরচেনা শস্য-শ্যামল সবুজে ঘেরা ছায়া পথ ছিলো। গত কয়েক দিন আগে গাবুরায় পা দেখে এখানে নতুনভাবে জন্মানো গাছগুলো দেখে মনটা শান্তিতে ভরে উঠল। গাছগুলোতে একটু আলতো ছোঁয়া দেয়ার চেষ্টা করলাম। শরীর আনন্দে নেচে উঠল। অনেক সময় ধরে সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মনে হলো- চোখের পাওয়ার খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। গাছ-গাছালি পাখ-পাখালির দেশ বাংলাদেশ। গাছ লাগানো এখন অনেক মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।নদী ভাঙন রোধে এখানে রাস্তার ধার বাঁধের পাশে গাছ লাগানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক বাড়ির মালিক তার বাস্তু ভিটার ওপর শাক-সবজি, ফুল-ফল ছাড়াও দেশি-বিদেশি গাছের বাগান গড়ে তুলেছেন। এটা সত্যি আনন্দের বিষয়। দ্বীপ খ্যাত গাবুরায় বৃক্ষরোপণ অনেক বেড়েছে। এতে করে বেড়েছে সবুজায়নের মাত্রাও। যার ফলে তাপমাত্রা হ্রাস ও পরিবেশ রক্ষায় অনেক সহায়ক হচ্ছে। আমরা সকলেই সে জন্য এই সুন্দর কাজের সুদূরপ্রসারী অগ্রযাত্রায় আশাবাদী। সারাদেশের ন্যায় প্রতি বছর এখানে এখন বৃক্ষমেলা হয়। বৃক্ষমেলার মাধ্যমে বৃক্ষরোপন রোপন অনেকাংশে বেড়ে বলে এখানকার স্থানীয়দের কাছঠ থেকে জানা যায়। এখানকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছোট ছেলেমেয়েরাও গাছ কিনে রোপণ করে তাদের অভ্যাসকে প্রতিষ্ঠিত করছে। নিঃসন্দেহে এটা শুভ উদ্যোগ। এখানকার স্থানীয় মুরব্বিদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, মানুষ বেইমানি করলেও গাছ কখনো মানুষের সঙ্গে বেইমানি করে না। সে প্রতিনিয়ত আমাদের সেবা দিয়েই যায়। বাতাস, ফুল, ফল ইত্যাদি আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। পরিশেষে আনাচে কানাচে সবুজে ভরে উঠুক। সবুজ বেষ্টনিতে পরিণত হোক গাবুরা ইউনিয়ন এই কামনা করি।

অনীকের নাগরিক স্মরণ সভায় কন্ঠশিল্পী আবু আফফান রোজ বাবুর কন্ঠে উচ্চারিত হলো তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা। স্তব্ধ স্থির একাডেমি মিলনায়তন যেনো আরেক বার ডুকরে কেঁদে উঠলো। শিল্পী মঞ্জুরুল হক গাইলেন যাবার আগে কিছু বলে গেলে না। কবিতার ভাষায় মিনা মিজানুর রহমান বললেন আকাশের অগনিত নক্ষত্রের মেলা থেকে খসে পড়লো একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, সে তো অনীক আজিজ স্বাক্ষর। কেউ গাইলেন তুমি রবে নীরবে। কবি তৃপ্তি মোহন মল্লিক বললেন পৃথিবীর ধ্রুব সত্য বানী চিরন্তনী, সাম্যবাদ মৃত্যুতে প্রকট। তুমি ছিলে তুমি আছো। সংস্কৃতিকর্মী মুশফিকুর রহমান মিল্টন কবিতার শব্দে বললেন অনীক আজিজ স্বাক্ষর এমন যার নাম। ক্ষনিকের ছোঁয়া পেয়ে মোরা হারিয়ে ফেললাম।
ফুলে ফুলে ভরে উঠা অনীক আজিজের প্রতিকৃতি ঘিরে শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশ পথ যেনো প্রস্ফুটিত বাগানে পরিনত হয়েছিল। অগনিত মানুষের পদচারনায় যেনো জীবন্ত হয়ে উঠেছিল প্রবেশ দ্বার। ২১ জানুয়ারি আত্মহননের অবিশ্বাস্য ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে ওঠা মানুষ কেবলই নীরবে অশ্রু মুছেছেন। হৃদয়ের গভীরে ক্ষত নিয়ে বারবার কেঁেদছেন। বাবা মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন ‘আমার আক্ষেপ আমার ছেলে মিছিলে আন্দোলনে সংগ্রামে মারা যায়নি কেনো। কেনো সে লড়াইয়ের ময়দানে একজন সৈনিক হিসাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেনি। মা নাসরিন খান লিপি বলেন আমার ছেলের কোনো চাহিদা ছিল না। ছিল আমার প্রতি পাগলের মতো অফুরান ভালবাসা। বোন অদিতি আদৃতা সৃষ্টি কান্না জড়িত কন্ঠে জানালো আমাদের জীবন ছিল রাখী বন্ধনের মতো। আমাদের জীবন ছিল বন্ধুর মতো। স্মরণ সভায় শামীম পারভেজের ‘অনীক মানে যোদ্ধা’ ডকুমেন্টারিতে ফুটে উঠেছে অনীকের জীবন, তার সংগ্রাম, তার চলার পথ, তার আদর্শ, তার প্রকৃতি ও জীবনবোধ ও মানবপ্রেম। মাসুদুল হকের ছবিতে প্রস্ফুটিত হয়েছে প্রকৃতির প্রতি অনীকের ভালবাসার অন্তরঙ্গ চিত্র। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে এসে দৈনিক সত্যপাঠ সম্পাদক হারুনার রশীদ বলেন অনীক নিজেই প্রগতির সকল কাজে স্বাক্ষর করে গেছে। অনীক নিজেই একটি শিক্ষা, নিজেই একজন শিক্ষক। সাংবাদিক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন অনীক ছিল গনজগরণ মঞ্চের সম্মুখ সারির সংগঠক ও সার্বক্ষণিক কর্মী। অনীকের নিরহংকার চরিত্র আমাদের তরুণদের জন্য আদর্শ হতে পারে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো.মোসলেমউদ্দিন বলেন অনীকের আদর্শের পথ প্রলম্বিত। অনীক একজন নিবেদিত সৈনিক। তার স্মরণে তৈরি হবে অনীক ট্রাস্ট। অনুভূতি ব্যক্ত করতে এসে কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন বলেন মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য। তুমি রবে নীরবে। ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ বলেন ‘আমরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অভিন্ন অঙ্গিকারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। অনীকের আদর্শ আমাদের আদর্শ, অনীকের গনজাগরন মঞ্চ আমাদের মঞ্চ, অনীকের সব অঙ্গিকার আমাদের অঙ্গিকার, তা থেকে আমরা যেনো কেউ সরে না যাই। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন অনীক ছিল আমার নিকট প্রতিবেশি। ঢাকার মিছিলে সংগ্রামে তার পায়ে স্যান্ডেল নেই, হাতে ছিল ক্যামেরা। তাকে দেখে সাহস জাগে, কারণ অনীকরাই তো সমাজ পরিবর্তনের শক্তির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তিনি বলেন ‘তোমার স্বপ্ন গুলো পূরন হবে। দেশে বিপ্লব হবে। লাল পতাকার জয় হবে’।
