আসাদুজ্জামান: সাতক্ষীরার শীর্ষ স্বর্ণ চোরাকারবারী মিলন পাল ওরফে গোল্ডেন মিলনকে অবশেষে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে তাকে সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আটক মিলন সদর উপজেলার মাগুরা গ্রামের দেবদাশ পালের ছেলে। এদিকে, পুলিশ তাকে শনিবার রাতে আটক করলেও পুলিশের খাতায় তাকে আটক দেখানো হয়েছে রোববার রাতে। পুলিশ জানিয়েছে, রোববারা রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।
মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্যা জানান, গত শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা সীমান্ত থেকে ভারতে পাচারের সময় ১৬ কেজি ৩১৮ গ্রাম স্বর্ণসহ আলিউজ্জামান নামের এক বহনকারীকে আটক করে বিজিবি। ওই সোনা চোরাচালানের ঘটনায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে মিলনপালকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে সাতক্ষীরা চীফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয়েছে। রিমান্ড শুনানির পর তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তিনি আরো জানান। এদিকে, আটক আলিউজ্জামানকে (স্বর্র্ণ বহনকারী) ৩ দিনের রিমান্ডে এনে সদর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মিলনপাল গত ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শহরের মিলবাজার রামপ্রসাদ দত্তের জুয়েলারী দোকানের কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে শহরের নাজমুল সরণিতে দীগন্ত মার্কেটে শিল্পী জুয়েলার্সে কর্মচারী হিসেবে যোগাদন করেন। শিল্পী জুয়েলারির কর্মচারী হতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়ে যান মিলনপাল। মিলন জুয়েলার্স নামে শহরের নাজমুল সরণিতে জুয়েলারি ব্যবসা করতে থাকেন তিনি।
সম্প্রতি মিলন পাল আলাউদ্দীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। মাগুরা গ্রামসহ সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিলনপালের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠে এসেেেছ। মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান এবং হুন্ডির টাকা এপার ওপার করার আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট এখন তার হাতে। রাজধানী ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিলন পাল বিলাসবহুল মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার যোগে স্বর্ণের বড় বড় চালান পাচার করে থাকেন। আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারী ভারতের বারী বিশ্বাসের কাছেও তিনি স্বর্ণ পাচার করে থাকেন। ২০০৫ সালের মিলন পাল ২০১৬ সালে এসে হয়েছেন গোল্ডেন মিলন। মাদক, হুন্ডি এবং স্বর্ণ চোরাচালানী পরিচালনা করে মিলনপাল শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
সমগ্র সাতক্ষীরা জেলার মানুষ বিগত প্রায় ২ বছরের বেশি সময় বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছে কী নির্লজ্জতার সাথে তৎকালীন জেলার আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই মিলন ও তার চোরাচালানী চক্রকে আইনের বাইরে রেখেছিলেন।
বর্তমান পুলিশ সুপারের দৃঢ়তায় অবশেষে শীর্ষ এই স্বর্ণ চোরাকারবারী আইনের জালে ধরা পড়ায় পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে সচেতন মহলের ধারণা।