জি.এম আবুল হোসাইন : সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ বিস্তীর্ণ এলাকা টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে। সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবারও প্রবল বর্ষণে মরার ওপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। শনিবার মধ্যে রাত থেকে ইউনিয়নে অবিরাম বর্ষনে নিম্ম এলাকা প্লাবিত হয়ে জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে মাছের ঘের, আমন ফসলের বীজতলা ও রোপনকৃত ধান ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শত শত ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় জনজীবনে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। খেটে খাওয়া অসহায় মানূষ কাজ করতে না পারায় দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে।
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার মধ্যে রাত থেকে একাটানা প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় মৎস্য ঘের ও আমন ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। রবিবার সারাদিন এক টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। অধিকাংশ চাষীরা তাদের আমন ধান চাষের জন্য তৈরিকৃত বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রব্যর্মূল্যের বাজারে হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরিকৃত বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রমে তারা ধান চাষ নিয়ে সংশয় গ্রস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। অনেক চাষী ইতিমধ্যে ধান রোয়ার কাজও করেছে। যা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পচে নষ্ট হতে পারে ভেবে হতাশ হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর মৎস্য ঘের প্রবল বৃষ্টিপাতে একাকার হয়ে যাওয়ায় মৎস্য চাষীরা রয়েছে চরম বিপাকে। টানা বর্ষণে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের সদ্য রোপন করা আমন ধানের ফসল। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। ডুবে গেছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। উপ-সহকারি কৃষি অফিসার হাসান রেজা বলেন, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে ১৫ শত বিঘা রোপা আমন পানিতে তলিয়ে থাকায় আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১কোটি ২৩ লক্ষ টাকার অধিক। এলাকাবাসি জানিয়েছে, মাঠে অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘের তৈরি করার কারণে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় এই বৃষ্টির পানি মাঠ থেকে বের হতে পারছেনা। ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের রাজবাড়ী, ঝাউডাঙ্গা, হাচিমপুর, হাজিপুর, পাথরঘাটা, আখড়াখোলা, দত্তবাগ, ওয়ারিয়া, গোবিন্দকাটি, বিহারিনগর, তুজলপুর, বলাডাঙ্গা, ছয়ঘরিয়া, মাধবকাটি সহ আরো কয়েকটি এলাকা বিরামহীন বর্ষায় ডুবে গেছে। অনেকেই নতুন নতুন ঘের তৈরি করে কালভার্টের মুখ আটকিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছে। হাজিপুর এলাকার কথিত সেচ প্রকল্প কমিটি খালের মুখ বেঁধে মাঠে মাছ ছেড়ে দিয়েছে। ফলে ওই মাঠে রোপা ধান পানিতে ডুবে গেছে। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে হাচিমপুর, রাজবাড়ী, গোবিন্দকাটি, বিহারীনগর সহ কয়েকটি এলাকায়। মাঠে অপরিকল্পিতভাবে ঘের তৈরি করে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করার ফলে এসব এলাকা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এসব ঘের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন এলাকাবাসি।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশেনের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। তুজলপুর, মোহনপুর, বিহারিনগর, ওয়ারিয়া, গোবিন্দকাটি সহ বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষের প্রতিদিন এবাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেচাকেনা করে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে বাজারের চারপাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পরিষদের পেছন দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতেও পানি কানায় কানায় পরিপূর্ণ । নামে মাত্র পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও নদীর পানি উল্টো চাপ দিচ্ছে। ফলে পরিষদ চত্ত্বরে ও বাজারের অধিকাংশ নিচু এলাকায় জমে আছে প্রায় হাঁটু পানি। ব্যবসায়ীদের জীবন যাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ। পরিষদের পাশে গড়ে উঠা দোকানপাট ব্যবসায়ীরা খুলতে পারছে না। এছাড়া পরিষদের পাশেই গড়ে উঠেছে ঝাউডাঙ্গার কাঁচা বাজার। পুরো কাঁচাবাজারটা পানিতে নিমজ্জিত। আরো পরিষদের পাশে আছে মসজিদ ও মন্দির। পুরো বাজারটির অবস্থা শোচনীয়। বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ আর নোংরা পরিবেশ। এবিষয়ে পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেও পরিষদের সামনে পানি জমে থাকে। পানি নিষ্কাসনের নেই কোন সুব্যবস্থা। বিগত দিনে বেতনা নদী খননের কাজে ব্যাপক ফাঁকিবাজি ও দূর্নীতি হয়। ঐ সময় নদীর দুপাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করে কোন রকমে লোক দেখানো নদী খননের কাজ করা হয়। নদীর দুই পাশে অবৈধ দোকান পাট ও অপরিকল্পিত ভেড়ীবাধেঁর কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা নেই। স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবসায়ী জিয়াদ আলী বলেন, জলাবদ্ধতার কারনে আমরা দোকানপাট খুলতে পারছি না। আবার কেউ কেউ দোকান খুললেও নেই কোন ক্রেতার আনাগোনা। আরেক কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, পুরো বাজারটি পানিতে ডুবে থাকার কারনে হাঁটে বসতে পারছি না। আমরা দিন আনি দিন খাই। বৃষ্টিতে আমাদের ব্যবসা বন্ধ। অথচ কারোর কোন উদ্যোগই নেই পানি সরানোর।
কাঁচামালের আড়তদার জয়দেব বিশ্বাস বলেন, আমার দোকানের মধ্যে এখনো হাঁটু পানি জমে আছে। বাজারেপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বেত্রাবতী নদীর দুই পাশে অবৈধ দখলদারেরা স্থায়ীভাবে দোকান পাট ও বসত বাড়ি নির্মান করার ফলে নদী সংকুচিত হয়ে পড়েছে। একারণে একটু বৃষ্টি হলেই বাজারের প্রায় অর্ধেক অংশ পানিতে ডুবে যায়। বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. আল মামুন জানান, আমরা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারছি না। আমার দোকান রেখে মেইন রোডের ধারে পরিষদের গেটের পাশে দোকান দিতে বাধ্য হচ্ছি। ঠিকমত বেচাকেনা করতে পারছি না। পার্শবর্তী বেত্রাবতী নদীতে পর্যাপ্ত জোয়ার-ভাটা না থাকায় এবং দীর্ঘদিন ভেড়িবাঁধ সংস্কারের অভাবে টানা বর্ষণে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এঅবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন এলাকাবাসি।