মাহফিজুল ইসলাম আককাজ : ‘নারী পুরুষ নির্বিশেষে, সমাজসেবায় গড়ব দেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০১৮ উপলক্ষে র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে জেলা অফিসার্স ক্লাবের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আলোচনা সভায় গিয়ে মিলিত হয়। জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য সাতক্ষীরা-০২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। এসময় তিনি বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদফতর দারিদ্র নিরসন ও সামাজিক ক্ষমতায়নে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ভাতা ও উপবৃত্তি কার্যক্রম, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও ভাতা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। শিশু সুরক্ষা, সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধসহ প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও কমিউনিটি ক্ষমতায়নে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নতুন নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে অবদান রাখবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সব খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। আওয়ামী লীগ সবসময়ই দেশের দারিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। বর্তমান সরকার গত কয়েক বছরে দেশের দুুস্থ, দরিদ্র, অসহায় শিশু, প্রতিবন্ধী, কিশোর-কিশোরী, স্বামী নিগৃহীত মহিলা ও প্রবীণ ব্যক্তিবর্গসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ও উন্নয়নকে বেগবান করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও নতুন নতুন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, তখনই দেশের দুস্থ, দরিদ্র, এতিম, প্রতিবন্ধী, অসহায় শিশু, কিশোর-কিশোরী, মহিলা ও বৃদ্ধসহ সকল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের জন্য শিশু আইন ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। সরকারি শিশু পরিবার স্থাপন করেন। সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালুসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম চালু করেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক দেবাশিস সরদার, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হারুন অর-রশিদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম আনিছুর রহমান, শহর সমাজসেবা অফিসার শেখ সহিদুর রহমান প্রমুখ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান, এনজিও কর্মী জোসনা দত্ত, অন্ধ পুনর্বাসন কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। আলোচনা সভা শেষে সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির চেক প্রদান ও বয়স্ক ভাতার বই বিতরণ করা হয়। সব শেষে মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রোকনুজ্জামান।

সোমবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, পাঠ্যপুস্তক দিবস ২০১৮ বই উৎসব বেলুল ও ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা- ০২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। এসময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ কপি পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪২৮ কপি এবং প্রাথমিক স্তরের বই ১১ কোটি ছয় লাখ এক হাজার ৫২১ কপি। সাতক্ষীরা জেলায় মাধ্যমিক স্তরে ২০লক্ষ ৫৭ হাজার ৯০ সেট বই এবং সদর উপজেলায় ৪লক্ষ ২০ হাজার সেট বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১লক্ষ ৪০ হাজার ৬শ’ ৬১ সেট বই এবং ৩৩ হাজার ৩শ সেট বই বিতরণ করা হচ্ছে। আজকে খুব আনন্দের দিন। নতুন বই মানে আলাদা আনন্দ। উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষাই একমাত্র পন্থা। বিশ্বে এমন কোন দেশ নেই যেখানে বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
